রংপুরে সমাবেশ-পদযাত্রায় সাঈদসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি
২ আগস্ট ২০২৪ ২১:১২
রংপুর: কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার, আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া সকল শিক্ষার্থীর মুক্তি, হয়রানি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছে শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুর বারোটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও পদযাত্রার ব্যানার নিয়ে একত্রিত হন। এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সকাল থেকেই প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিতে শুরু করে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থী, অবিভাবক ও শিক্ষকরা। সমাবেশ শেষে দুপুর ১টার দিকে পদযাত্রা বের করা হয়।
পদযাত্রায় বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়। পদযাত্রাটি সম্প্রতি নামকরণ করা আবু সাঈদ চত্বর (পার্কের মোড়) ঘুরে রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় হয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে (আবু সাঈদ গেট) এসে শেষ হয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার পদযাত্রায় কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারে থাকা দায়িত্বশীলদের মদদে আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ-পুলিশ সদস্যরা হামলা করে, মারধর করে, ভয়ভীতি সৃষ্টি করে। তারাই শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়। আবু সাঈদকেনির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিনা অপরাধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার অভিযান বন্ধ করতে হবে।’
এ সময় শিক্ষকেরা বলেন, ‘আগামী শনিবার দুপুরের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের দায়ের করা এফআইআর না পাল্টালে ওই দিন বিকেলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।’
সমাবেশে অবিভাবকরা বলেন, ‘আবু সাঈদসহ সারা দেশে চলমান এই ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষিদের শাস্তির আওতায় আনা সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আনার জন্য সরকারকে সব ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে।’
সমাবেশে অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘বায়ান্ন, উনসত্তর, একাত্তর ও নব্বইয়ে জয় পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা, এবারও তারা হারবেন না। নতুন প্রজন্মের মন বুঝতে না পারার কারণে সাধারণ একটি বিষয়কে আজ জাতীয় সমস্যায় পরিণত করা হয়েছে। সরকার আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করতে না পারলে এ সংকট ক্রমেই বাড়তে থাকবে।’
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে আরও বক্তৃতা দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান, বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজাম মুনিরা, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ উল হাসান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের সংগঠক মনিরুল ইসলাম মুকুল, জান্নাত সৃষ্টি, আশিকুর রহমানসহ অনেকে।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রংপুরসহ পুরো দেশজুড়ে।
সারাবাংলা/এমও