‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসুন, অপশক্তিকে সুযোগ দিয়েন না’
৩ আগস্ট ২০২৪ ২১:১০
ঢাকা: কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল, সেটি পূরণ হয়ে গেছে। এখন আর আন্দোলন করার কিছু নেই। অপশক্তিকে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির আর সুযোগ দেয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনার আহ্বানকে গ্রহণ করুন।
শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্তরালে অপশক্তির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাতে দোয়া করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন,
আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হয়েছে। এর পেছনে অপশক্তি ও কুশীলবরা রয়েছে। এখন ভিন্নমাত্রার আন্দোলন হচ্ছে, সেখানে নতুন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হচ্ছে। কারা এসব যুক্ত করছে সরকারকে তা চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি বলেন, উদ্ভূত সংকট নিরসনে সরকারকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। তবে এর আগে সব ধরনের সহিংসতা পরিহার করতে হবে।
অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন গণভবনের দরজা শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা। এই সুযোগ শিক্ষার্থীদের নিতে হবে। কিভাবে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে হয় শিক্ষার্থীরা তা আমাদের দেখিয়ে দিলো। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে তারা যেন নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। এখান থেকে তারাই ফিরবে না যারা দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চায় না।
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা শান্তি চাই। যে উদ্দেশ্যে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিলো সেটি পূরণ হয়ে গেছে। এখন আর আন্দোলন করার কিছু নাই। তবে যারা নিহত হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে বিচার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সেই প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, আন্দোলনের ওপর ভর করে অপশক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করছে। অপশক্তি যেনো এই আন্দোলনে ভর করে দেশের আর কোনো ক্ষতি করতে না পারে। ছাত্ররা তোমরা শান্ত হয়ে তোমাদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাও। তোমাদের আরও কোনো দাবি থাকলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তা উপস্থাপন করতে পারো। উনি অবশ্যই ন্যায়বিচার করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বলেন, এই আগস্ট মাস আমাদের শোকের মাস। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সরকারি হিসেবে ১৫০ জন নিহত হয়েছেন। কিছু দল আছে যারা দেশকে পুলিশি রাষ্ট্র পরিণত করতে চায়। ভাসানীকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। উনি কিন্তু পাকিস্তানকে ওয়ালাইকুম সালাম বলেছিলেন। কিন্তু উনি জাতীয় পতাকা আনতে পারেননি। দেশকে জাতীয় পতাকা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের কথা বলতে আসিনি, দেশপ্রেমের কথা বলতে এখানেএসেছি। মুক্তিযোদ্ধারা কোটার জন্য যুদ্ধে যায়নি। স্বাধীনতার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গিয়েছিল। আমি যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের মাথায় জাতীয় পতাকা দেখি সেটি আমাকে ভাবায়। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ উনি সবাইকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। তবে দল থেকে আগাছা পরিষ্কার করার এখনই সময়।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়রে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আহমেদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা তাদের জীবন দিয়েছেন তাদেরকে আমরা স্মরণ করছি। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন যারা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে তাদের আমরা শনাক্ত করেছি এবং যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আলোচনার দরজা খোলা। দেশবাসী হিসেবে আমরা আসলে শান্তি চাই। ছাত্রদের আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কতগুলো তাজা প্রাণ গেল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইন মেনে চলা উচিৎ সবার আগে। সব আন্দোলনেই পর্দার আড়ালে তৃতীয় শক্তি কাজ করে। বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো গুজব ও অপপ্রচার। আমরা যেনো আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কানির মধ্যে ঠেলে না দেই। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সার্বিক সমন্বয় করে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
ড. আহমেদ বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আরো অনেক বেশি প্রশিক্ষণ দরকার। গুলি চালিয়েই কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্দোলন দমন করতে হবে? এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান আবেদ আলী বলেন, প্রথমদিকে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছিল এবং সরকার পর্যবেক্ষণ করছিল। ছাত্ররাও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাদের দাবি উপস্থাপন করছিল। এই ছাত্রদেরকে কারা সহিংসতার দিকে নিয়ে গেল তা এখনো জাতির সামনে স্পষ্ট নয়।
তিনি বলেন, ঘটনার পেছনে আরো ঘটনা আছে। ছাত্রদের আন্দোলনের ওপর ভর করে অন্য উদ্দেশ্য হাসিলের প্রক্রিয়া চলছিল। ছাত্রদেরকে কেউ না কেউ সামনে নিয়ে আসছে। সেই অপশক্তিটা কারা? ছাত্রদের আন্দোলনটাকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অতি উৎসাহী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। পাশাপাশি যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তাদেরও বিচার করতে হবে। শুধু তাই নয় এই আন্দোলনের পেছনে কারা আছে? তাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত করতে হবে।
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান বলেন, গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমরা জানতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান ছাত্রদের শান্ত করতে শিক্ষকদের দায়িত্ব দেন। ছাত্রদের দাবি শোনার জন্য শিক্ষকদের কমিটি করে দেওয়া হোক।
তিনি বলেন, নিষিদ্ধ করে সব শেষ হয় না। যাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারা কি দেশ ছেড়ে চলে গেছে? আজ এবং গতকালের আন্দোলনে সেই নিষিদ্ধ সংগঠন এর অনেকই উপস্থিত ছিল। প্রত্যয় স্কিম বাতিল করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে আপনারা গ্রহণ করুন। অপশক্তিকে সুযোগ করে দিয়েন না।
সারাবাংলা/এনইউ