Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিকিৎসাসেবায় স্থবিরতা, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ আগস্ট ২০২৪ ২২:০২

ফাইল ছবি

ঢাকা: দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবায় নেমে এসেছে স্থবিরতা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে শুরু করে স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালগুলোতে দায়িত্বশীল চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে এই বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার পতনের পর প্রায় চিকিৎসক-কর্মকর্তাশূন্য হয়ে পড়েছে দেশের হাসপাতালগুলোতে। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদের।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবায় কখনো লেজুড়বৃত্তি দলীয় রাজনীতি সমর্থন করা মানুষদের আগে মনে রাখতে হবে তারা চিকিৎসক। আর চিকিৎসকদের ধর্মই হলো যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের প্রাণের ঝুঁকি বিবেচনা না করে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাওয়া। যদি কোনো কারণে সেটা ব্যাহত হয় তবে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রাখতেই হবে। আর সাম্প্রতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সচল করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে চিকিৎসাসেবা সচল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সোমবার (৫ আগস্ট) ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরেই মূলত ফাঁকা হয়ে যেতে শুরু করে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের চেয়ার। এরপরে প্রায় ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কার্যত স্বাভাবিক হতে পারেনি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

গত দুই দিন রাজধানীর একাধিক বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ শীর্ষ পদে থাকা চিকিৎসকরা অনুপস্থিত।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাসপাতালে রোগীরা আসছে। সবাইকে জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য স্থানে চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও আওয়ামী লীগ পন্থী অনেক চিকিৎসকের পাশাপাশি অধ্যক্ষের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য (ভিসি) ডা. দ্বীন মোহাম্মদ থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের সহ-উপাচার্য (প্রো ভিসি), রেজিস্ট্রারসহ আরও অনেককেই সংশ্লিষ্ট বিভাগে গিয়ে দেখা যায়নি।

জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকসহ অধিকাংশ সিনিয়র চিকিৎসক অনুপস্থিত। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পাশাপাশি পূর্বনির্ধারিত অস্ত্রোপচারের সময় ঘিরে অপেক্ষমাণদের ভোগান্তিও বাড়ছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও দেখা গেছে প্রায় একই পরিস্থিতি।

এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে দলীয় রাজনীতির সুযোগে নানাভাবে পদ পাওয়ার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক অনুসারীদের এক ধরণের দমন নীতি চালানো হয়। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারা নিজেরাই প্রতিষ্ঠানে আসছেন না।

 পরিস্থিতি প্রতিকূলে হওয়ার কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ চিকিৎসকরাই বর্তমানে সামনে আসছেন না।

এমন অবস্থায় হাসপাতালে রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা নিতে এসে পড়ছেন বিপাকে। আর তাই করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি একটি সেবা। আর তাই এটিকে চালু রাখতেই হবে। যেহেতু দেশে বড় একটা আন্দোলন ও পরিবর্তন ঘটে গেলো তাই সেটার প্রভাব বিভিন্ন স্থানে পড়বেই।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তারা এখনো আছেন, তাদের এই সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী একটা কমিটি গঠন করে দেওয়া প্রয়োজন। সেটার নাম হতে পারে জরুরি চিকিৎসা কমিটি বা এমন কিছু একটা যেটা স্বাস্থ্যসেবাটা চালিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করবে। এক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগে সার্জারি বা অন্য চিকিৎসার জন্য যদি কোনো অধ্যাপককে পাওয়া না যায় তবে সেক্ষেত্রে সহযোগী অধ্যাপক বা সহকারী অধ্যাপক কাউকে দিয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তবে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে সচল করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের যারা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আছেন বা জুনিয়র চিকিৎসক আছেন তারাও উদ্যোগ নিতে পারে স্বাস্থ্য সেবাটা সচল করার বিষয়ে। তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে এ কাজটা করতে পারে। কোনো বিভাগে সার্জারি হচ্ছে না বা কোথায় রোগীরা চিকিৎসা না নিতে পেরে বা জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে না পেরে ফেরত যাচ্ছে সেটা তারা বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।

ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাশাপাশি অনেক মেডিকেল অফিসারসহ আরও অনেকে আছেন যারা দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না। তারা কিন্তু হাসপাতালে নিয়মিতই আছেন বর্তমান পরিস্থিতিতেই। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কিন্তু তাদের নিয়েও স্বাস্থ্যসেবাটা চালিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়াটা জরুরি। এক্ষেত্রে তারা চাইলে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে একটা সমন্বয়ক কমিটি গঠন করে দিতে পারে। জেলা, উপজেলা পর্যায়েও কিন্তু এমন সমন্বয়ক কমিটি করে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনাটা সচল রাখা জরুরি। এর আগেও আমরা এরশাদের পতনের জন্য যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল সে সময়ও এভাবে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে গেছি।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক চিকিৎসক কিন্তু জীবনের মায়া কাটিয়েও সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালে গেছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ চলাকালীন সময়েও কিন্তু তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তার মানে তারা কিন্তু তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছে। সুতরাং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের এখন প্রয়োজন সমন্বয়টা করে দেওয়া। সেটা যদি হাসপাতাল ভিত্তিক হয়ে থাকে তবে আরও ভালো হবে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে সচল করার জন্য বর্তমানে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল।

তিনি বলেন, যারা বর্তমানে চিকিৎসা সেবা দিতে আসতে পারছে না নানা ভয়ে তাদের অভাব কিভাবে কাটানো যেতে পারে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা কিন্তু পরামর্শ দিতে পারে। এমনকি হাসপাতাল পরিচালনার জন্যেও তারা সাপোর্ট করতে পারে। বর্তমান অনেক অবসরপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, পুষ্টিবিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদ আছেন যাদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তাদের যদি এখন বলা হয় এক থেকে দুইটা হাসপাতালে সুপারভাইজ করার জন্য তবে তারা কিন্তু সেটা না করবে না। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা স্বাভাবিক করার জন্য সবাই এগিয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে যদি কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কট দেখা দেয় তবে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা জুনিয়রদের সাহায্যও করতে পারে। এটা করা খুব জরুরি। পুলিশ নাই বলে রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ করছে ছাত্ররা। কিন্তু সেটা তো আর তারা সবসময় করতে পারবে না। আর স্বাস্থ্যে তো অন্য কেউ এসে চিকিৎসকের পরামর্শ দিতে পারবে না।

একটা সমন্বয়ক কমিটি করে দেওয়া যেতে পারে যেনো অন্তত স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে কোনো রোগী নিরাশ হয়ে ফেরত না যায়- যোগ করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল।

তবে দুই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই বলেন, যারা লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি করে বিভিন্ন পদ-পদবী বাগিয়েছে তাদের স্থানে কিছু পরিবর্তন আনতেই হবে। তবে সেটা ঢালাও ভাবে না করে ধীরে ধীরে করা প্রয়োজন। আবার তার মানে এই না যে বাইরে থেকে এক জুনিয়র চিকিৎসককে ঢাকার একটা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া। একটা সিস্টেমেটিক প্রক্রিয়ার মাঝে যেতে হবে।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, আমরা অফিসে যাচ্ছি নিয়মিত। একই সঙ্গে সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই যোগাযোগ করে স্বাস্থ্যসেবা যেনো কোনো ভাবেই ব্যাহত না হয় সেই নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি।

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

চিকিৎসক বেহাল দশা স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর