‘অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার আইনশৃখলা পরিস্থিতি ও আর্থিক খাত’
৯ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৩৭
ঢাকা: শপথ গ্রহণের পরদিনই বৈঠকে বসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অনানুষ্ঠানিক হলেও বৈঠকে সরকারে প্রধান উপদেষ্টাসহ সব উপদেষ্টাই উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, বর্তমান বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আর্থিক খাতকে স্বাভাবিক করাই হবে এ সরকারের অগ্রাধিকার। বৈঠকে এ দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা বেশি হয়েছে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকারের বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন- উপদেষ্টারা কে কোন দফতর পেলেন
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হলো। বৈঠকে আমরা সবাই যার যার কথা বলেছি। এক ধরনের ভাববিনিময় ও মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের মধ্যে দফতর বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আর্থিক খাত নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। এই দুটি খাতকে কীভাবে যত দ্রুতসম্ভব স্বাভাবিক করা যায়, সে বিষয়টিকেই আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা করেছি।
রিজওয়ানা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বেশ সময় নিয়ে আলোচনা করেছি। যত দ্রুতসম্ভব কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের একটি বিষয় বুঝতে হবে, আজই সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু যত দ্রুত সবকিছু সমাধান করা যায়, সেটিই চেষ্টা থাকবে।
বৈঠকের পর সবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যাওয়ার কথা ছিল উপদেষ্টাদের। তবে পরে এই বৈঠকেই যোগ দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান। রিজওয়ানা বলেন, বৈঠকে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আবার তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
আরও পড়ুন- প্রধান উপদেষ্টার হাতে ২৭ দফতর
ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, আইজিপির কাছে এ বিষয়ে কিছু তথ্য রয়েছে। সব তথ্য আবার প্রচারিত তথ্যের সঙ্গে মিলছে না। প্রকৃতপক্ষে থানাগুলোও এখনো কাজে ফিরতে পারেনি। এ অবস্থায় পুলিশ যত দ্রুতসম্ভব যেন কাজে নেমে যায়, সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে চাই। তবে এর জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। পুলিশের মতো একটি বাহিনীর মনোবল ভেঙে গেলে তাদের পক্ষে কাজ করা কঠিন। তাই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যারা রয়েছেন, তাদেরও সঙ্গে নিয়ে সবার সহযোগিতায় পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফিরিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর হামলা প্রতিরোধে সবাই মিলে রক্ষা বলয় তৈরির কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান রিজওয়ানা। বলেন, কিছু কিছু জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বশীল সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে আপাতত একটি রক্ষা বলয় তৈরি করে সবাইকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে আইজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে।
আর্থিক খাত নিয়ে আলোচনার বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক খাতগুলোকে শুধু চালু করলেই হবে না, সক্রিয় করতে হবে। এর জন্য নেতৃত্বস্থানীয় জায়গাগুলোতে যে পরিবর্তনগুলো প্রয়োজন, সেগুলো অনতিবিলম্বে আনার চেষ্টা করা হবে।
আরও পড়ুন- টেলিযোগাযোগ-তথ্যপ্রযুক্তিতে নাহিদ, যুব-ক্রীড়ার দায়িত্বে আসিফ
তিনি আরও বলেন, ব্যবসাকে উজ্জীবিত করার জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। তাদের উজ্জীবিত করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, সেগুলো করা হবে। জনগণের কষ্ট লাঘবে বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আমাদের যে উপদেষ্টা রয়েছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে এসব বিষয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন।
দুর্নীতি বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আর্থিক খাতে নানা ধরনের ‘ইভিল প্র্যাকটিস’ রয়েছে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে হবে। যেসব জায়গা ফাঁকা রয়েছে সে জায়গাগুলোতে উপযুক্ত জনবল বসিয়ে ইভিল প্র্যাকটিসগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে একটি দুর্নীতি বা ব্যাড প্র্যাকটিস নয়, সার্বিকভাবে গোটা ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই ব্যাড প্র্যাকটিস দূর করার জন্য কাজ করব।
আরও পড়ুন- স্মৃতিসৌধ ও শহিদ মিনারে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রদ্ধা
রাষ্ট্রব্যবস্থার নানা খাতে সংস্কার নিয়েও অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান রিজওয়ানা হাসান। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বিচার, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, নিবর্তনমূলক বিভিন্ন আইনের সংস্কারের মতো সব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেয়। শুক্রবার সকালে তারা প্রথমে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহিদ ও পরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দুপুরের দিকে তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকে বসেন। সরকার গঠনের পর এটিই তাদের প্রথম বৈঠক, যদিও এটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
আরও পড়ুন-
- পরে শপথ নেবেন ৩ উপদেষ্টা
- প্রধান উপদেষ্টার হাতে ২৭ দফতর
- ইউনূসকে অভিনন্দন নরেন্দ্র মোদির
- বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
- ভোট হবে, তার আগে রাষ্ট্র সংস্কার: নাহিদ
- রাতে শপথ, উপদেষ্টাদের জন্য প্রস্তুত ২২ গাড়ি
- প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন ড. ইউনূস
- ড. ইউনূস থাকবেন যমুনায়, উপদেষ্টারা মন্ত্রিপাড়ায়
- শপথ নিলো অন্তর্বর্তী সরকার, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস
- শপথ নিয়েই আহতদের দেখতে হাসপাতালে ড. ইউনূস
- ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার, স্থান পেয়েছেন ২ সমন্বয়ক
- ভুয়া ভুয়া স্লোগান, বঙ্গভবনে ঢুকতে পারেননি মাহী বি চৌধুরী
- ‘সরকার প্রত্যেকের, সবার আকাঙ্ক্ষা পূরণের অধিকার থাকবে’
- পশুশক্তির বিরুদ্ধে লড়েছি, তেমন যেন না হই: আসিফ নজরুল
- শপথ নিলো অন্তর্বর্তী সরকার, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
- বাংলাদেশের ‘নতুন বিজয়ে’ তরুণদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ড. ইউনূসের
- ৩ থেকে ৫ বছরের অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্রপ্রতিনিধি চায় শিক্ষার্থীরা
- স্থান পেলেন ৪ নারী উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এবারই সর্বোচ্চ
- জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে কোনো কাজই অসম্ভব না: রিজওয়ানা হাসান
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর্থিক খাত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক পরিবেশ উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা সরকারের অগ্রাধিকার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান