চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন থানায় কার্যক্রম সীমিত আকারে শুরু হয়েছে। কাজে ফিরতে শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে শিগগিরই স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর সুযোগ কম। কারণ অনেক থানা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গাড়ি, কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বেশিরভাগ থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে আরও বেশ কিছুদিন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকেই নগরীর কিছু কিছু থানায় পুলিশ সদস্যরা আসতে থাকেন। ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলো পরিদর্শনে যান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। লুট করে নেওয়া হয়েছিল অস্ত্র। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এ ঘটনায় নগরীর ১১টি থানা আক্রান্ত হয়। আগুন দেওয়া হয় আটটি থানায়। ছয়টি থানা থেকে লুট করে নেওয়া হয় অস্ত্র। এরপর থেকে ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে যায় পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার (সন্ধ্যার মধ্যে সব ইউনিটের সদস্যকে কাজে যোগদান করার নির্দেশ দেন।
এদিকে পুলিশবিহীন চট্টগ্রামে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুটসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি এলাকায় এলাকাবাসী নিজেরাই ডাকাত ধরে সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করেছেন।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) আবদুল মান্নান মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বেশকিছু থানায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেসব থানা বেশি আক্রান্ত হয়েছে সেগুলোতে কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে। অনেক থানায় পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেসব থানাগুলোতে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী ও আন্দোলনকারী ছাত্রদের সহায়তায় পুলিশ সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় পেট্রল ডিউটি করছে। সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। অচিরেই সব নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। মানুষের মাঝে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সেটাও দূর হবে।’
পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী একটি শৃঙ্খলার মধ্যে চলে। আমাদের যে ১১ দফা দাবি ছিল সেটা থাকবে। কিন্তু পুলিশরা যদি কাজ না করে তাহলে দেশের অরাজকতা সৃষ্টি হবে। দেশের কথা ভেবে তাই আবার পুলিশ সদস্যরা মাঠে নেমেছে। সব পুলিশ এখনও যোগ দেয়নি। আস্তে আস্তে সবাই কাজে নেমে পড়বে।’
নগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের চার থানায় কাজ শুরু হয়ে গেছে। সকাল থেকে থানাগুলোতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। চকবাজার থানা বেশি আক্রান্ত হয়েছে তাই সেখানে হয়তো কাজ পুরোপুরি শুরু করতে একটু সময় লাগবে। তবে পুলিশ সদস্যরা আগের মতোই মাঠে থেকেই কাজ করবে।’
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে জানান, চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামি,খুলশী, পাঁচলাইশ, সদরঘাট, চকবাজার, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, কর্ণফুলী ও বন্দর থানায় কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। শনিবার (১০ আগস্ট) হালিশহর, ডবলমুরিং ও কোতোয়ালি থানায় (প্রাঙ্গণ) কাজ শুরু হবে। এছাড়া পতেঙ্গা থানার কার্যক্রম শুরু করতে নতুন ভবন খোঁজা হচ্ছে।
চান্দগাঁও থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) মোমিনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকাল আটটা থেকেই থানায় যোগ দিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। থানার অন্যন্য পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন।’