Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৃতের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা দাবি, ছাত্রদের হাতে আটক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ আগস্ট ২০২৪ ০০:৫৭

ঢামেক হাসপাতালে আটক খোকন লাল। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী দুজনের কাছ থেকে মরদেহ হস্তান্তরের জন্য টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে খোকন লাল নামে এক স্টাফের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন তাকে আটকে ফেলেন। পরে তাকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে তুলে দেন।

শুক্রবার (৯ আগষ্ট) সন্ধ্যার দিকে ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের পাশে মর্গ কার্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে। মৃত দুই ব্যক্তির স্বজনদের কাছে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে খোকন লালের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট যশোর সদরে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থায় একটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই ভবনে দগ্ধ হন শিক্ষার্থী সাকিব (১৮)। রাতেই স্বজনরা তাকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সাকিবের মৃত্যু হয়।

নিহত সাকিবের বাবা আলাল উদ্দিন জানান, তাদের বাড়ি যশোর সদরের শংকরপুর গ্রামে। সাকিব গ্রামের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। ৫ আগষ্ট যশোর চিত্রার মোড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে দুর্বৃত্তরা জাবেদ টাওয়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দগ্ধ হয় সাকিব। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সাকিবের শরীরের ৭৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।

আলাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ছেলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে বের করতে বিপাকে পড়ে গেছি। একজন বলে এখানে যান, আরেকজন বলেন ওখানে যান। এভাবে আমাদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা চলে যায়। ট্রলিতে করে ছেলের মরদেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় টাকা দাবি করে। টাকার বিষয়ে মর্গ অফিসের দায়িত্বে থাকা খোকন লালকে দেখিয়ে দেয়।

এ ছাড়া মিরপুরে ভবন থেকে পরে নিহত জালাল (৪০) নামে এক শ্রমিকের মরদেহও ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জালালের স্বজনদের কাছেও খোকন ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জালালের এক স্বজন আলমগীর হোসেন বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) মিরপুরে নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করার সময় নিচে পরে গুরুতর আহত হয় জালাল। ঢাকা মেডিকেলে এনে আমরা ভর্তি করি। আজ (শুক্রবার) বিকেল ৫টার দিকে জালাল মারা গেছে। কিন্তু ওর লাশ নিতে মর্গ অফিসে গেলে খোকন লাল নামে একজন আমাদের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছে। বলেছে, এখন পুলিশ নেই। লাশ নিতে দেরি হবে। পরে এক ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিলে খোকন আট ৮হাজার টাকায় লাশ ছেড়ে দিতে রাজি হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সদস্য মাহিম সরকার বলেন, আমাদের এক ভাই যশোরে আন্দোলন করতে গিয়ে শহিদ হয়েছে। স্বজনরা তার মরদেহ নিতে গিয়ে বিভিন্ন হয়রানির স্বীকার হয়েছেন। এমনকি লাশ নিয়ে যেতে টাকাও দাবি করেন করেন এক স্টাফ। আমরা তাকে ধরে ফেলেছি। তার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। তিনি একজন ক্লিনার।

মাহিম সরকার আরও বলেন, এর আগেও হাসপাতালে মৃত্যুবরণকারীদের মরদেহ হস্তান্তরের জন্য খোকন স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিতেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। তিনি নিয়মিতই এ কাজ করে থাকে। আজ আমরা তাকে ধরে ফেলেছি। সেনাবাহিনী আসছে। ঢাকা মেডিকেলের পরিচালকের সঙ্গেও কথা হয়েছে।

অভিযুক্ত খোকন লাল অবশ্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আমি কারও কাছে টাকা দাবি করি নাই। বাইরে থেকে কে বা কারা টাকা চেয়েছে, সেটা আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা খোকন লাল নামে এক স্টাফকে আটক করেছে। তাদের অভিযোগ, মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছে খোকন টাকা দাবি করেছেন। তাদের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর

টপ নিউজ টাকা দাবি ঢামেক হাসপাতাল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর