ঢাকা: পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ)।
সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবিএ সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনের তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে আমরা দেখেছি, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগী না হয়ে, বাজারের মূল কাঠামোর উন্নয়নে গুরুত্ব না দিয়ে বাজারে আইপিও আনা, প্লেসমেন্ট শেয়ার, প্লেসমেন্ট বাণিজ্য ইনডেক্স ঊর্ধ্বমুখী করার প্রতি তাদের বেশি আগ্রহ ছিল। আশা করছি, দেশব্যাপী যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, সে হাওয়া শেয়ারবাজারেও বইবে এবং এখন থেকে সব নিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অবসান হবে।’
মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আপনারা যারা অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার নিয়ে নিয়মিত কাজ করেন, তারা জানেন যে, ২০০৯-২০১০ সালে এ বাজারের পতনের পর লাখ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যান। শেয়ার কেনায় মার্জিন ঋণ প্রদানকারী বহু প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। এরপর থেকে বাজার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় বারবার ক্ষতির মুখে পড়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে যান।’
ডিবিএ সভাপতি বলেন, ‘বাজার পতনের কারণ ও দোষীদের খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর প্রয়াত ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা বাজার কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আজও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে সেই কারসাজি চক্র আরও সক্রিয় হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর ধরে ড. এম. খাইরুল হোসেন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা থেকে এসে এই পদে আসীন হন। এই দীর্ঘ সময়ে তাদের অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায়।’
ডিবিএ সভাপতি বলেন, “পুঁজিবাজারটি কেবলমাত্র ইক্যুইটি নির্ভর এবং এর বাইরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আজ পর্যন্ত অন্য কোনো কার্যকরী পণ্য বাজারে আনতে পারেনি। আইপিওর নামে গত ১৪ বছরে যে পরিমাণ দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইপিওর মাধ্যমে বাজারে অনুপযুক্ত, দুর্বল, মানহীন, দেউলিয়াগ্রস্ত কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি ‘ফ্লোর প্রাইস’ নামক একটি অদ্ভুত নিয়ম আমাদের বাজারে আরোপ করা হয়েছে। এই ‘ফ্লোর প্রাইস’ শেয়ার বেচাকেনায় বাধা সৃষ্টি করে এবং বাজারের স্বাভাবিক লেনদেন ও বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”
সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজার টেকসই ও বাস্তবমুখী উন্নয়ন, তথা এ বাজারের সকল বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালিন সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো- অবিলম্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থেকে সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে হবে। বিগত দুই কমিশনের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি উদ্ঘাটনে অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তির সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্বের খেয়ানত ও দুর্নীতি-অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা জন্য আইনের আওতায় আনতে হবে।’