ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার ছয় দিন পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অভিযোগ তুলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হস্তক্ষেপই তাকে উৎখাত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হোয়াইট হাউজের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র বলেছেন, বাংলাদেশে যা ঘটেছে সেটি বাংলাদেশের মানুষই নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশে সরকার পতনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হাত নেই। এ ধরনের অভিযোগ ভুয়া।
সোমবার (১২ আগস্ট) হোয়াইট হাউজের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়ের এসব কথা বলেন। হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশের সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য ধরেই সরাসরি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল জ্যঁ-পিয়েরের কাছে।
আরও পড়ুন- যুক্তরাষ্ট্রের ‘ষড়যন্ত্রে সরকার’ পতন, শিগগিরই ফিরব: শেখ হাসিনা
ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। ছয় দিন পর গত রোববার ভারতের দ্য প্রিন্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কারণে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপ চেয়েছিল, যা দিতে রাজি না হওয়ার কারণেই ষড়যন্ত্র করে তাকে উৎখাত করা হয়েছে।
বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সেন্টমার্টিন ও বঙ্গোপসাগর ছেড়ে দিতাম, তাহলে ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।’ শিগগিরই দেশে ফিরে আসার প্রত্যয়ও জানান তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়ের বলেন, (বাংলাদেশে সরকার পতনে) আমাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এসব ঘটনায় জড়িত বলে যদি কোনো প্রতিবেদনে দাবি করা হয় বা কোনো গুঞ্জন যদি থাকে, সেগুলো স্রেফ ভুয়া, একেবারেই ভুয়া। এগুলোর কোনো সত্যতা নেই।
আরও পড়ুন- মায়ের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, তা বানোয়াট: জয়
জ্যঁ-পিয়ের বলেন, যা ঘটেছে এটি বাংলাদেশের মানুষ বেছে নিয়েছে এবং তারাই এটি ঘটিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষকেই তাদের সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা উচিত। আমরা এই অবস্থানেই অটল।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবনের এই মুখপাত্র আবারও বাংলাদেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার বলেন, যদি কোনো ধরনের অভিযোগ এসেও থাকে, আমরা নিশ্চিতভাবেই এটাই বলব, যা এখানে বলেছি— এ ধরনের কোনো অভিযোগ স্রেফ সত্য নয়।
দ্য প্রিন্টের রোববারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দেশে বার্তা পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা। বার্তায় তিনি তার পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেন, মানুষের মৃত্যু এবং সম্পদহানি ঠেকাতেই তিনি সরে গেছেন।
আরও পড়ুন- অন্তর্বর্তী সরকারকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আহ্বান গুতেরেসের
পরে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগের আগে বা পরে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি। দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে যে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে তা বানোয়াট।
এদিকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নিয়েছে। দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদন বলছে, ওই বার্তায় শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারকেও বিদেশি ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।