ভেসে আসা বর্জ্যে সয়লাব কক্সবাজার সৈকত
১৪ আগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৮
কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভেসে এসেছে নানা ধরণের বর্জ্য। এসব বর্জ্যের কারণে পাল্টে গেছে চিরচেনা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে বেড়াতে আসা পর্যটক ও পর্যটন সেবী সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের কবিতাচত্তর পয়েন্ট থেকে কলাতলীর শেষ পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি পয়েন্টে শুধু বর্জ্য আর বর্জ্য। সকালে জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসা এসব বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে ছোট-বড় গাছের টুকরো, বাঁশের শেকড়, পোড়া কাঠ, খড় ইত্যাদি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা অন্তত ১০ থেকে ১২ টনের অধিক বর্জ্য ভেসে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বর্জ্যের মধ্যে থাকা গাছ-বাঁশগুলো যে যার মত করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই হল সমুদ্র পাড়ের ক্ষুদ্র কিটকট ব্যবসায়ী নারী-পুরুষ। এছাড়া অনেক নারী পরিচ্ছন্নকর্মী বর্জ্য অপসারণ করছিলেন। তবে বর্জের বড় অংশ সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ে থাকলেও বীচ ম্যানেজমেন্ট বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অপসারণের তেমন উদ্যোগ ছিল না।
বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকে জানান, দেশের কঠিন পরিস্থিতি শেষে একটু স্বস্তির জন্য বেড়াতে এসেও শান্তি নেই। সমুদ্র সৈকতের এমন দৃশ্য তারা আগে দেখেনি। এ যেন আবর্জনার উপর দাঁড়িয়ে সমুদ্র সৈকত উপভোগ করছে। গোসল করাতো দূরের কথা ভরপুর আর্বজনায় হেটে ভ্রমণ করাও কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমুদ্র সৈকতের ফটোগ্রাফার সাইফুল ইসলাম বলেন, সকালে জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসা বর্জ্যে নষ্ট হয়ে গেছে সৈকতের সৌন্দর্য। এই নোংরা পরিবেশের কারণে পর্যটকরা ছবি তুলতে চাইছেননা। ফলে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ।
সমুদ্র সৈকতে ভাড়াই চালিত বীচ বাইকার জালাল উদ্দিন বলেন, দেশের অস্থির পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই ব্যবসা হচ্ছে না। যখনই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে পর্যটক আসা শুরু করেছে তখনই সাগর থেকে আবর্জনা এসে ভরে গেছে। এই অবস্থায় বীচ বাইকে চড়তে চাইছেননা পর্যটকরা। সকালের দিকে এসব আবর্জনা ভেসে আসলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তা অপসারণ করা হয়নি।
বেড়াতে আসা পর্যটকের মধ্যে বাপ্পা চৌধুরী নামে এক যুবক জানান, দেশের অস্থির পরিস্থিতি শেষে একটু সস্তির জন্য কক্সবাজারে ঘুরতে এসেও মন খারাপ হয়ে গেল। এখানে এসে মনে হল আবর্জনা পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছি। প্রাকৃতিক নানা কারণে এমনটা হতেই পারে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অপসারণ করা।
সুমাইয়া আক্তার নামে আরেক নারী পর্যটক জানান, আমরা আসছি গত দুই দিন আগে। গতকালও সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছিল। আজ পরিবার নিয়ে গোসল করতে এসে মন খারাপ হয়ে গেছে। সবাই চেয়ারে বসে সকালে আবর্জনা ভেসে আসার দৃশ্য দেখছি। বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম যাতে অন্তত কোন একটি পয়েন্টের আবর্জনা যদি সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে গোসলের ইচ্ছেটা পূর্ণ হত। এখন হয়ত সমুদ্র স্নান ছাড়াই ফিরতে হবে ঢাকায়।
বর্জ্যেও বড় অংশ সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ে থাকলেও বীচ ম্যানেজমেন্ট বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এদিকে আর্বজনা অপসারণের প্রসঙ্গে জানতে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া না পাওয়ায় কথা বলা যায়নি।
কক্সবাজার ট্রুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজ মুরশেদ জানান, সমুদ্র থেকে বর্জ্য ভেসে আসার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেখানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ভেসে আসা বর্জ্য অপসারণ করা হবে।
সমুদ্র সৈকত থেকে বর্জ্য ভেসে আসার বিষয়টি নতুন নয়। কেন এমটা হচ্ছে এই প্রসঙ্গে কোনো বিশেষজ্ঞের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ মাসেও টানা কয়েকদিন একই ধরণের বর্জ্য সৈকতে ভেসে এসেছিল।
ওই সময় বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বোরি) দায়িত্বে থাকা মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানিয়েছিলেন, সমুদ্রে নিম্নচাপ, বায়ুপ্রবাহ, পানির ঘূর্ণায়ন (এডি), সমুদ্রের পানির গতি প্রবাহসহ সমুদ্র পৃষ্ঠের ধরণের উপর ভিত্তি করে সমুদ্র উপক‚লের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ভাসমান প্লাস্টিসহ ও অন্যান্য বর্জ্য জমা হয়েছে। এসব নিন্মচাপে জোয়ারের সময় সমুদ্রের উপরি পৃষ্ঠের পানি অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়ে ফুলে উঠে ও ঘূর্ণণের ফলে সমুদ্রের ভাসমান বর্জ্য জমা হয়ে ভেসে আসে।
আর্বজনা অপসারণের প্রসঙ্গে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গণি ওসমাণী জানান, জোয়ারের সাথে সাথেই ময়লা পরিষ্কার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব আর্বজনা অপসারণ করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এনইউ