কেটে গেল ঢাকা দক্ষিণ সিটির জন্মনিবন্ধন ভোগান্তি
১৫ আগস্ট ২০২৪ ২৩:৪৯
ঢাকা: প্রায় এক বছর ভোগান্তির পর কেটে গেল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতা। সারা দেশের মানুষের জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে হলেও ২০২২ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুধুমাত্র ঢাকা দক্ষিণের বাসিন্দাদের সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে জন্মনিবন্ধন করতে হতো। এতে ওই এলাকার জনসাধারণের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি, প্রতিষেধক নেওয়া, পাসপোর্টসহ বেশ কয়েকটি সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। অবশেষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে এ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ সিটি করপোরেশন-১ শাখা থেকে সিটি করপোরেশনে জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলামের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অধিক্ষেত্রে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম কেন্দ্রীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সার্ভার বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ২৭ মার্চ, ১৩ মে ও ৫ জুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পালন করা হয়নি, যা আইন ও বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, ১৪ আগস্ট অফিস সময়ের মধ্যে এ বিভাগে ৫ জুন পাঠানো চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হলো। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বাবদ এরই মধ্যে নেওয়া সব ফি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে নির্ধারিত কোডে জমা দিয়ে চালানের অনুলিপি অতি দ্রুত এ বিভাগে (স্থানীয় সরকার বিভাগ) পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হলো।
এতদিন যত নিবন্ধন হয়েছে তার তথ্য স্থানান্তরের নির্দেশনা দিয়ে অফিস আদেশে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব সার্ভারে এরই মধ্যে সংরক্ষিত জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের আওতাধীন কেন্দ্রীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সার্ভারে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলো। এ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় প্রয়োজন অনুযায়ী কারিগরি সহায়তা দেবে।
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, বিধি মোতাবেক জারিকৃত এ আদেশ আবশ্যিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হলে সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন: ডিএসসিসি’র জন্ম নিবন্ধন: অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে জনভোগান্তি
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১ অক্টোবর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব সার্ভারে জন্মনিবন্ধন ও সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনে ভোগান্তি তো আছেই, তার ওপর সনদ পেয়ে তা কোনো কাজেই লাগছে না। শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি, পাসপোর্ট করার মতো নানাধরনের কাজ থমকে যায়।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয়ে করা জন্মনিবন্ধন দিয়ে সরকারি নানা সেবা পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ, জন্ম নিবন্ধনের তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভার বা সফটওয়্যারে জমা হয়নি। আবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্ভারে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জন্মনিবন্ধন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক সেসব প্রতিষ্ঠান তথ্য ভেরিফাই না করতে পেরে এটি গ্রহণ করছিল না।
এসব জটিলতায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন থেকে ইস্যু করা সনদ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, মোট ২৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এপিআই’র (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টিগ্রেশন) জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন হয়ে গেছে। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্ভার থেকে তথ্য যাচাই করতে পারবে। কিন্তু বাকি ২৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখনো ইন্টিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শেষ হয়নি বলে জানিয়েছিল গত ডিসেম্বরে।
জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় পাসপোর্ট করতে গিয়ে। ফলে অনেকেই পাসপোর্ট করতে যেয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন বা ঢাকার বাইরের ঠিকানা ব্যবহার করে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করান।
নতুন অফিস আদেশ অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আজ (১৫ আগস্ট) সকাল থেকে চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো কাজ করা শুরু করেছে। আগের নিবন্ধনগুলোর তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ১০ মাসে দক্ষিণ সিটি থেকে ৭৮ হাজার ৯৫৬টি জন্মনিবন্ধন এবং ১ হাজার ৪৭১টি মৃত্যুনিবন্ধন হয়েছে। এর আগের চার মাস জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফি নিজস্ব তহবিলে জমা দেওয়ার দাবিতে নিবন্ধনের কাজ বন্ধ রাখে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম