কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা আসছে
৪ জুন ২০১৮ ০৯:৩৬ | আপডেট: ৪ জুন ২০১৮ ১৩:৩৮
।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হতে যাচ্ছে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা। খাতটিকে শৃঙ্খলা আনা ও অগ্রাধিকারভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সুবিধার্থে এ কাজে হাত দিয়েছে সরকার। নীতিমালা তৈরি হলে কৃষি যন্ত্রপাতির উৎপাদন ও আমদানিতে থাকা সমস্যাগুলো দূর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন।
সরকার কয়েক বছর ধরেই কৃষি যান্ত্রিকীরণকে উৎসাহিত করে আসছে। নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে হাওর অঞ্চলের কৃষককে ৭০ শতাংশ ও সারাদেশের কৃষককে ৫০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। তবে নীতিমালা না থাকায় দেশে যন্ত্রপাতির উৎপাদন ও আমদানিতে ভারসাম্য আনা সম্ভব হয়নি।
এ ছাড়া, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর ও শুল্ক সম্পর্কিত সমস্যা দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালা তৈরি হলে এসব সমস্যা দূর হওয়ার সাথে সাথে সরকার থেকে উন্নয়ন সহায়তায় দেওয়া কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণেও আরো স্বচ্ছতা আসবে।
এদিকে, চলতি জুনেই নীতিমালার খসড়ার কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে সরকার গঠিত ৫ কমিটির একজন সদস্য। সারাবাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে কমিটির বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে নীতিমালার খসড়া নিয়ে আলোচনা চলছে। নীতিমালায় সংযোজন-বিয়োজনের প্রস্তাব দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিনিধি। বৈঠকে যান্ত্রিকীরণের কৌশল, সম্প্রসারণ ও সরকার কিভাবে যান্ত্রিকীকরণকে উৎসাহিত করবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া হাওরের কৃষি, যন্ত্রপাতি খাতে সেবাদাতা, আমদানিকারকদের কর ও ভ্যাট অব্যাহতি নিয়ে আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, কমিটির সদস্যরা যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক, আমদানিকারক, মেকানিক ও কৃষকদের প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছেন। গত ৭ এপ্রিল এক কর্মশালায় তাদের ভাবনা ও প্রস্তাব লিখিত আকারে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও কমিটির সদস্যরা বগুড়ার খুচড়া যন্ত্রাংশ তৈরির হাব পরিদর্শন করে এসেছেন।
এর মধ্যে গত ২৯ মে নীতিমালার প্রাথমিক খসড়া নিয়ে বৈঠক হয়েছে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্বশেষ ৩ জুনও একটি বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। জুনের মধ্যেই নীতিমালা তৈরির কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। তবে তা চূড়ান্ত করতে আরও ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান ড. মো. সাত্তার মন্ডলকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রাক্তন নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. ক্ষিরোদ চন্দ্র রায় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ মো. নাজিম উদ্দিন।
নীতিমালা তৈরির প্রাসঙ্গিকতা
কৃষি যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় সরকার উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। প্রতিটি উপজেলার কৃষকেরা উন্নয়ন সহায়তায় পাওয়ার টিলার, থ্রেশার, রিপার, কম্বাইন হারভেস্টার, সিডার ও ফুট পাম্প কিনতে পারছেন। ফলে, প্রতিনিয়তই জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষি যন্ত্রপাতি। সরকারি সহায়তায় কেনা কৃষি যন্ত্রপাতির পরিমাণও বাড়ছে। সারাদেশে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ২৬৮ টি পাওয়ার থ্রেশার, ১ হাজার ৭২৩টি রিপার, ৪৪৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৭টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও ১ হাজার ১৯৫টি সিডার কিনেছেন কৃষকেরা। বছরটিতে বিতরণকৃত যন্ত্রের পরিমাণ ৪ হাজার ৬৪১টি।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ধান কাটার যন্ত্র সিডার। গত তিন বছরে দেশে যন্ত্রটির চাহিদা বেড়েছে ১২ গুণ। এটা গত বছরের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারি সহায়তায় ১০২টি সিডার কেনেন কৃষকেরা। পরের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৩৩৪টি। তবে ভর্তুকিতে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ১৯৫টি সিডার।
এ ছাড়া, গত বছরের তুলনায় ধান কাটার আরেক যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টারেরও চাহিদা বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। এছাড়া বেসরকারিভাবে কৃষিতে বাড়ছে যন্ত্রপাতির প্রসার। দেশের অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কারখানা। বগুড়ার খুচরা যন্ত্রাংশের হাব এরই মধ্যে নজর কেড়েছে।
নীতিমালা তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ মো. নাজিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীরণ নিয়ে আগে কোনো নীতিমালা ছিল না। এটি নিয়ে প্রথমবারের মতো কাজ শুরু হয়েছে। নীতিমালা না থাকায় এসব যন্ত্রের উৎপাদন ও আমদানিতে কিছু সমস্যা ছিল। এছাড়া উৎপাদক পর্যায়ে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়াতেও ছিল সমস্যা। নীতিমালা হওয়ার পর কোথায় কী অগ্রাধিকার দিতে হবে তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। ফলে খুব সহজেই সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমও গ্রহণ করা সম্ভব হবে।’
সারবাংলা/ইএইচটি/টিআর