মাছ চাষ সম্প্রসারণে চুয়াডাঙ্গায় কাজ করছে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’
১৭ আগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৪
চুয়াডাঙ্গা: পুষ্টি চাহিদা মেটানো ও মাছ চাষ সম্প্রসারণে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে এবং জেলা মৎস্য অধিদফতরের সহযোগিতায় কাজ করছে চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশন। জেলার সদর উপজেলার বেগমপুর, দামুড়হুদা উপজেলার দামুড়হুদা সদর, কার্পাসডাঙ্গা, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন ও আলমডাঙ্গা উপজেলার আঁইলহাস ইউনিয়নের পুরুষ-নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মৎস্য কর্মকর্তা সাঈদ-উর-রহমান বলেন, ‘পিকেএসফের অর্থ সহায়তায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৮১টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নত ব্যবস্থাপনায় মাছ চাষ বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ ৩টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, মাছচাষের জন্য উপযোগী করতে ৭৫ জন পুরুষ উপকারভোগীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ জেলার ৩টি উপজেলা ও ১৫টি ইউনিয়নে মাছ চাষ বাড়ানোর জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জি-৩ জাতের রুই মাছ চাষ ১০টি, উন্নত চাইনিজ কার্প জাতের মাছ চাষ সম্প্রসারণ ৫টি, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে দেশি প্রজাতির পাবদা-কার্প মাছের মিশ্র চাষ ১০টি, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে কার্প ফ্যাটেনিং মাছ চাষ ৫টি, উত্তম ব্যবস্থাপনায় অফ-ফ্লেভার মুক্ত পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ চাষ ১০টি, হাজামজা ও পরিত্যক্ত পুকুর সংস্কার করে মাছ চাষ ৫টি, প্রাকৃতিক খাদ্য নির্ভর মাছ চাষ ২টি, মাছের পোনা চাষে উদ্যোক্তা তৈরি ১০টি, নিবিড় পদ্ধতিতে ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ ২টি, অণুপুষ্টিসম্পন্ন দেশি ছোট প্রজাতির মাছ (এসআইএস) চাষ ৫টি, পুষ্টিসংবেদনশীল মলা মাছের ব্রুড ব্যাংক ৫টি, উত্তম ব্যবস্থাপনায় সদস্য পর্যায়ে উৎপাদিত মাছ বিক্রি করার জন্য ১টি কেন্দ্র ও ১টি অক্সিজেনেটেড ভ্যানে মাছের পোনা পরিবহন করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বয়রা গ্রামের শেখ সাদি জানান, তিনি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ৭০ বিঘা পরিমান পুকুরে মাছ চাষ করছেন। তার পুকুরে মলা মাছের ব্রুড ব্যাংক আছে। ওই পুকুরে উৎপাদিত মলা মাছ তিনি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কাছেই বিক্রি করছেন। এখানকার মাছ অন্যান্য পুকুরেও ছাড়া হচ্ছে।
বয়রা গ্রামের খোকন হোসেন, লিটন ও শহিদুল জানান, মলা মাছের চাষ বাড়ানোর জন্য ওয়েভ ফাউন্ডেশন তাদের মাছ কিনে দিয়ে সহযোগিতা করছে। এই মাছ তারা পুকুরে চাষ করবেন।
একই উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পুরনের জন্য ওয়েভ ফাউন্ডেশন আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ট্যাংকিতে মাছ চাষের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মাছ বড় করে সেগুলো ধরে আমরা রান্না করে খাচ্ছি। গত প্রায় দুবছর থেকে আমাদের পরিবারে মাছ কিনে খেতে হচ্ছে না।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল জানান, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ জেলায় মাছের ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন। এবার অর্থাৎ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়য়েছে ১ হাজার ৬২০ মেট্রিক টনে। এরপরও চুয়াডাঙ্গা গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছরে ১১৫ মেট্রিক টন মাছের ঘাটতি রয়েছে।
এছাড়া জেলায় গত ও চলতি অর্থ বছরের হিসাব মতে মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৫ হাজার ১১২ জন। এসব মৎস্যজীবী ৪৪টি মৎস্যজীবী সমিতির আওতাভুক্ত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে মৎস্য চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে মাছের চাষ বৃদ্ধির চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/এমও