Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চব্বিশের সাইবার যোদ্ধা ইবির ফয়সাল

আজাহারুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৯

কুষ্টিয়া: একটি আন্দোলন। যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন লাখো শিক্ষার্থী-জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওটা এই আন্দোলন ক্রমশ রূপ পাল্টাতে থাকে। সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর দমন-পিড়নের শিকার হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এই আন্দোলনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাইবারকর্মীরাসহ যে যেভাবে পেরেছেন সহায়তা করেছেন।

আন্দোলনকে ঘিরে সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি ঘরে বসে আইটি বা সাইবার এক্সপার্টদের অংশগ্রহণ ছিল ঈর্ষণীয়। যাদেরকে অভিহিত করা হয়েছে সাইবার যোদ্ধা হিসেবে। তেমনি আন্দোলনকারীদের সহায়তা করেছেন ফয়সাল আহমেদ।

ফয়সাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের স্নাতক ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার নেতৃত্বে ও প্রশিক্ষণে দেশ ও বহির্বিশ্ব থেকে হাজারেরও বেশি সাইবার যোদ্ধা আন্দোলনকারীদের সাইবার নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি সরকারি ওয়েবসাইটে সাইবার অ্যাটাক চালিয়েছিলেন।

চব্বিশের এই সাইবার যোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলা’র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আজাহারুল ইসলাম।

সারাবাংলা: আপনাদের কার্যক্রম পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া কেমন ছিল?

ফয়সাল: গতানুগতিক সাইবার অ্যাট্যাক যেমন ডিডস দিয়ে সার্ভার উড়িয়ে দেওয়া বা ডিফেস আপলোড করা থেকে আন্দোলনকারীদের সাইবার নিরাপত্তাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। বিশেষ করে সরকারি বাহিনী যেন খুব সহজে আন্দোলনকারীরের ট্রেস করে আটক বা মারধর করতে না পারে। মেটা ডাটা বা OSINT করে Authenticate video footage collect করা ও উপযুক্ত প্রমাণসহ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। আন্দোলন সর্ম্পকিত ভুয়া ভিডিও, তথ্য,ছবি ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করা এবং অনলাইন থেকে রিমুভ করা।

সোস্যাল মিডিয়ার নিয়ম কারণ নিয়ে আন্দোলনকারীদের সচেতন করা যেন নিরাপত্তার সাথে তথ্য প্রচার করতে পারে। সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন সাইবার প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আন্দোলনকারিদের বিভিন্ন রকম আইটি রিলেড তথ্য ও পরামর্শ দেওয়া।

সারাবাংলা: এ ধরনের কার্যক্রমের চিন্তা কেন এলো?

ফয়সাল: বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সরকারি বাহিনীর জুলুম-অত্যাচার দেখে বসে থাকতে পারিনি। চিন্তা করলাম, যারা সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট আছি; সঠিক তথ্য পৌঁছিয়ে, আন্দোলনকারীদের সাইবার নিরাপত্তা অর্থ্যাৎ আইটি সাপোর্ট দিয়ে অন্তত সাধ্যমতো পাশে থাকতে পারি; তবেই নিজেকে তৃপ্ত করতে পারব। এই চিন্তা থেকেই ১৬ জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু করা।

সারাবাংলা: এত অল্প সময়ে এক হাজার সাইবারকর্মী কীভাবে সংগ্রহ করলেন?

ফয়সাল: দীর্ঘ ৬ বছর ধরে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করছি, কাজ করছি বাংলাদেশের অন্যতম সাইবার সিকিউরিটি ভলেন্টিয়ার প্রতিষ্ঠান Infosec BD এর চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে। Infosec BD এর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত লাখ লাখ শিক্ষার্থী থেকে এক হাজার শিক্ষার্থী পেতে বেগ পেতে হয়নি।

সারাবাংলা: আপনাদের এই শ্রমের জন্য কোনো চাওয়া পাওয়া আছে কী?

ফয়সাল : ব্যক্তিগতভাবে আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। মানুষের অধিকার রক্ষায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। স্বপ্ন দেখেছি নতুন বাংলাদেশ গড়ার এবং মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার। আমরা চাই, মানুষ তার সকল অধিকার ফিরে পাক। সূচনা হোক নতুন বাংলাদেশের। মুক্তি পাক বৈষম্য শান্তি থাকুক সবাই।

সারাবাংলা: আপনারা এই সাইবার কার্যক্রম চালু রাখবেন কি?

ফয়সাল: দেশ ও জাতির প্রয়োজনে আমরা আমরা কার্যক্রম চালু রাখব। নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে আমাদেরকে দক্ষ সুনাগরিক গড়ে তুলতে হবে।

সারাবাংলা: আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

ফয়সাল: সাইবার সিকিউরিটির বিষয়গুলো সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ। যেমন: ইথিক্যাল হ্যাকিং, বাগ হান্টিং , সোস্যাল মিডিয়া সিকিউরিটি, ডিজিটাল ফরেনসিক, সাইবার সিকিউরিটি ক্যারিয়ার গাইড লাইন, সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কিত সেমিনার সহ প্রশিক্ষণ ল্যাব সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সাধ্যমতো পৌঁছে দিতে চাই।

সারাবাংলা: সাইবার যোদ্ধা হিসেবে আন্দোলনে যুক্ত হতে পেরে আপনার অনুভূতি কেমন?

ফয়সাল: এই অনুভূতি প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি। সাধ্যমতো নিজের জায়গা থেকে কিছু করতে পেরেছি। এটাই বড় প্রাপ্তি। আমাদের অর্জিত দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে যাবো। আমাদের অনেক ভাই-বোন জীবন দিয়েছেন। আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।

সারাবাংলা/একে

কোটা কোটা সংস্কার আন্দোলন টপ নিউজ সাইবার যোদ্ধা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর