স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ৮ দফা দাবি, পেশ করা হবে স্বাস্থ্যনীতিও
১৮ আগস্ট ২০২৪ ২২:১৩
ঢাকা: দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের উন্নয়নে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদ। এর পাশাপাশি খুব দ্রুতই ‘জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিও’ পেশ করা হবে বলে জানিয়েছে নবগঠিত এই সংগঠনটি।
রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ দফা দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির নেতা ডা. তাজনুভা জাবিন।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এ দেশের গণমানুষের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আশার সঞ্চার করেছে।’
তিনি আরও বলেন, “জনগণ অন্যান্য অধিকার আদায়ের পাশাপাশি সর্বজনীন চিকিৎসাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে। এ প্রেক্ষাপটে গণমুখী স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘পেশাগত সুরক্ষা ও অধিকার’ নিশ্চিত করতে ১২ আগস্ট, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্রকামী চিকিৎসক সমাজের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হয়।”
ডা. তাজনুভা বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরেও এদেশে জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষায় অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাকে অধিকার হিসাবে সংরক্ষিত করা হয়নি। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করে স্বাস্থ্যখাতকে ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নেই। বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কোনো নিয়ম-নীতি ও তদারকি নেই। রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত থেকে হাজার কোটি টাকার লুটপাট হয় অথচ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ে না, যে বরাদ্দ আসে তাও সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না ‘
সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের জন্য ৮ দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো- শেখ হাসিনা সরকারের আমলে স্বাস্থ্যখাতে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ, স্বাস্থ্যখাতে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও শান্তি সমাবেশের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা; জুলাই অভ্যুত্থানে আহত সব ছাত্র-জনতার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন করা; স্বাস্থ্যসেবাকে সুযোগ নয়, অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান; দালাল মুক্ত হাসপাতাল, টেস্ট ও কমিশন বাণিজ্য বন্ধ এবং ওষুধের দাম কমানো; বিএমএ, ডেন্টাল সোসাইটিসহ সব মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে দলীয় লেজুড়বৃত্তি পেশীশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, ট্রেইনি ও রেসিডেন্সি কোর্সে অধ্যয়নরত বেসরকারি ডাক্তারদের যৌক্তিক বেতন কাঠামো প্রণয়ন (ন্যূনতম ৫০ হাজার); ডিজি হেলথসহ স্বাস্থ্য প্রশাসনে নিযুক্ত আওয়ামী লীগের দোসরদের অপসারণ এবং শূন্য হওয়া পদগুলোতে গণতন্ত্রমনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে ‘বিশেষ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনপূর্বক সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন নিশ্চিত করা এবং জুডিশিয়ারির ন্যায় স্বতন্ত্র ‘হেলথ সার্ভিস কমিশন’ গঠন ও তার অধীনে সমন্বিত, সুস্পষ্ট, গ্রহণযোগ্য, সার্বজনীন চাকরিবিধি প্রণয়ন, যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-পোস্টিং, জনবান্ধব চিকিৎসাসেবা, নিয়মতান্ত্রিক রোগী রেফারাল ও চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়মতান্ত্রিক পদোন্নতি সুনিশ্চিত করা।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম