Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যশোরে কর্মস্থলে যেতে পারছে না জনপ্রতিনিধিরা, নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি

তহীদ মনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ আগস্ট ২০২৪ ১০:১০

যশোর: যশোরে কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে বাধা ও হামলার মুখে পড়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। রোববার থেকে এই জেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা তাদের দফতরে কাজে যোগদান করতে পারেননি। অভিযোগ, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের দফতরে অবস্থান নিয়েছেন। কোথাও কোথাও হামলা করেছেন এবং হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। ফলে তারা জীবনাশংকায় ভুগছেন। এসব জানিয়ে নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরে স্থানীয় সরকারে চার স্তরের এক হাজার ৩২৩ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে যান। তাদের অনেকেই রোববার নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগকারীদের দাবি, রোববার সকালে থেকেই দফতরের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে দফতর। লুট করা হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের হাজিরা বইসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিও। এসব ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী জনপ্রতিনিধি।

তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছে জেলা বিএনপি। আর প্রশাসন বলছেন, বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

জানা যায়, যশোরে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় এই চার স্তরে ১ হাজার ৩২৩ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এর মধ্যে ৯১টি ইউনিয়নে এক হাজার ১৮৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বর, ৮টি উপজেলায় ২৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান-মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ৮টি পৌরসভায় ১০৪ জন পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর এবং জেলা পরিষদের ১২জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে চলে যান। তাদের অনেকেই রোববার নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু উপজেলা পরিষদে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেন, এমন খবরে রোববার সকাল থেকে বিএনপির একদল নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তারা উপজেলা পরিষদ ভবনে হানা দেন এবং চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরিষদে যাওয়ার পথে এ খবর পেয়ে ফিরে যান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিক পরিস্থিতির কারণে অফিসে যেতে পারিনি। আজ (রোববার) সকালে অফিসে যাওয়ার পথে শুনি সন্ত্রাসীরা অফিসের নিচে অবস্থান করছে, অফিসে হামলা চালিয়েছে। নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায় আমি আর অফিসে যাইনি। নিয়মিত অফিসে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত দিয়েছি।’

বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবীর বিপুল ফারাজী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা ও জনগণের দায়বদ্ধতা থেকেই আজ (রোববার) সকাল ৯টা ৭ মিনিটে আমি উপজেলা পরিষদে প্রবেশ করি। এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের কয়েকশত নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে উপজেলা পরিষদের মধ্যে জড়ো হয়। বিগত আমলে নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হবে না বলে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শে আমি সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি গাড়িতে করে গ্রামের বাড়ি চলে আসি।’

বাঘারপার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে প্রবেশ করে বাঘারপাড়া পৌরসভা কার্যালয়ে। ওই সময় পৌর মেয়র কামরুজ্জামন বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন না। তবে অফিসে বসা কয়েকজন কাউন্সিলরকে বের করে দেন নেতাকর্মীরা। মারধর ও লাঞ্ছিত করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামকে।

তিনি বলেন, আমরা পৌরসভাতে নিয়মিত কার্যক্রম করছিলাম। এমন সময় স্লোগান দিতে দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পৌরসভায় হামলা করে। এসময় কয়েকজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে ও বের করে দেয়। হাজিরা খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ নথি তারা নিয়ে যায়। টানা ২২ বছর কাউন্সিলর আমি। কাউকে অপমান অপদস্ত করিনি। অথচ আজ নোংরা রাজনীতির বলি হতে হলো।’

এদিকে, যশোর পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ রোববার পৌর ভবনে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। লাঞ্ছিত হয়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে তিনি আর দফতরে অফিস করতে পারেননি। এই বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর একদিন মাত্র অফিসে গেছি। বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকিতে যেতে পারছি না।

যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে, প্রতিপক্ষ রাজনীতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা না করার। সেইভাবে আমরা নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিয়েছি। আজ (রোববার) জনপ্রতিনিধিদের যোগদানের কথা ছিলো শুনেছি। তবে বাধা দেওয়া-হামলা করার এমন কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। সরকার যতদিন তাদের রাখবে, তারা ততদিন জনপ্রতিনিধি। আমাদের কোন নেতাকর্মী তাদের বাধা দিবে না।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের বাধা দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানাবো।’

সারাবাংলা/এমও

জনপ্রতিনিধি যশোর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর