‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ নয়’
১৯ আগস্ট ২০২৪ ১৩:০৩
ঢাকা: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আট সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল সংবিধানের ওই সংশোধনীর মাধ্যমে।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর সোমবার (২০ আগস্ট) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেছিলেন পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। তারা হলেন— সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফয়েজ আহমেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই এই সংশোধনীতে অনুমোদন দেন। ওই দিনই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয় এবং সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয় সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে।
পরে আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে বলা আছে— একসঙ্গে অনেকগুলো অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংশোধনী আনতে হলে গণভোট করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু কোনো গণভোট করা হয়নি। গণভোট না করে সংশোধনী পাশ করা সংবিধান পরিপন্থি।’
রিটের পক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলার লিখিত সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেনম পরবর্তী দুটি (দশম ও একদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। কিন্তু সেই আদেশ অমান্য করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে দশম ও একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করে দলীয় সরকারের অধীনে করা হয়। এ কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগের আদেশের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিপন্থি।
রিটে পঞ্চদশ সংশোধনী স্থগিত চাওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, রিটে পঞ্চদশ সংশোধনী স্থগিত চাওয়া হয়েছিল। স্থগিত করলে তা বর্তমান সরকারের জন্য সহায়ক হতো। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী স্থগিতের পর কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হয় কি না, সে ব্যপারে অ্যাটর্নি জেনারেল নিশ্চিত ছিলেন না। এমন মনোভাব প্রকাশের পর আদালত রুল জারি করেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও/টিআর