Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চেয়ারম্যান-মেয়রদের অপসারণ ও প্রশাসকদের নিয়োগ যে বিধিতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৯ আগস্ট ২০২৪ ২১:২৮

ঢাকা: দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তথা সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করেছে সরকার। এসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হয়েছে প্রশাসক।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ ও নতুন প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়েছে এসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনের একটি সংশোধনী, যা বিশেষ পরিস্থিতির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। জরুরিভিত্তিতে কার্যকর করতে এই সংশোধনী রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারেও জারি করা হয়েছে। সে বিধান অনুযায়ীই রোববার (১৮ আগস্ট) জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করেছে সরকার। তবে এসব প্রজ্ঞাপনের তথ্য জানাজানি হয়েছে সোমবার (১৯ আগস্ট)।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই লাপাত্তা ছিলেন বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়ররা। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ছাড়া বাকিদের কেউ গোপনে দেশ ছাড়েন, কেউ আত্মগোপনে চলে যান। দেখা মেলেনি প্যানেল মেয়রদেরও। এ পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের কাজে দেখা দেয় স্থবিরতা।

কেবল সিটি করপোরেশন নয়, পৌরসভা থেকে শুরু করে জেলা ও উপজেলা পরিষদেও দেখা গেছে একই চিত্র। তেমন কোথাওই জনপ্রতিনিধিদের দেখা মেলেনি। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবাদান নিশ্চিত করতে ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখতে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু বিদ্যমান আইনে সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে সিটি করপোরশন আইন, পৌরসভা আইন, জেলা পরিষদ আইন ও উপজেলা পরিষদ আইনে সংশোধনী আনতে হয়েছে সরকারকে।

আরও পড়ুন- ঢাকাসহ ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়র অপসারণ

সরকারের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই জনপ্রতিনিধি অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’; ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’; ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এবং ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ব্রিফিংয়ে জানায়, জরুরি কারণে, সময়ের প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে এসব অধ্যাদেশ সংশোধনীর খসড়া প্রণয়ন ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। গত শনিবার (১৭ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হিসেবে এসব সংশোধনী গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

চারটি অধ্যাদেশেই মূলত সংযোজন করা হয়েছে দুটি করে উপধারা। এর মধ্যে একটি উপধারায় নিজ নিজ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আরেকটি উপধারায় যুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের বিধান।

জনপ্রতিনিধি অপসারণে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এ ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে ধারা ১৩-এর পর ধারা ১৩ক যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে বা জনস্বার্থে সব সিটি করপোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলরদের অপসারণ করতে পারবে।

আরও পড়ুন- ১২ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক হলেন যারা

সংশোধনীতে ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনে একই বিধান যুক্ত করা হয়েছে ৩২ক ধারা হিসেবে। ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনীতে ১০খ ধারা ও ১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের সংশোধনীতে ১৩ঘ ধারায় একই বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণের ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়েছে নতুন এই ধারায়। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সব জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্যান্য সদস্যদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এই বিধানের মাধ্যমে।

এদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অপসারণের পাশাপাশি প্রশাসক নিয়োগ ও কমিটি গঠনের বিধানও যুক্ত করা হয়েছে সবগুলো আইনে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এ ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে ধারা ২৫-এর পর ধারা ২৫ক যুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) অধ্যাদেশে যুক্ত করা হয়েছে ৪২ক ধারা। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে ৮২ক ধারা ও উপজেলা পরিষদের ১৩ঙ ধারায় যুক্ত হয়েছে এই বিধান।

সিটি করপোরেশন অধ্যাদেশে সংযুক্ত ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে কিংবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে বা জনস্বার্থে যেকোনো সিটি করপোরেশনের কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে।

আরও পড়ুন- ৪৯৩ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৩২৩ পৌর মেয়রকে অপসারণ

এই ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজনে যথাযথ বলে বিবেচিত হয়— এমনসংখ্যক সদস্যদের সমন্বয়কে গঠিত কমিটিতে প্রশাসকের কর্মসম্পাদনে সহায়তা করার জন্য নিয়োগ করতে পারবে।

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে নিযুক্ত প্রশাসকরা মেয়র ও কমিটি থাকলে এর সদস্যরা কাউন্সিলরের দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন। অন্যদিকে জেলা ও উপজেলা পরিষদে নিযুক্ত প্রশাসকরা চেয়ারম্যান ও কমিটি থাকলে এর সদস্যরা পরিষদের সদস্য হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন।

সংশোধিত এসব আইনের বলেই রোববার দেশের ৬০টি জেলা পরিষদ ও ৪৯৩টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। একই দিনে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৩টি পৌরসভার মেয়রকেও অপসারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারের এই ৮৮৮টি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হয়েছে প্রশাসক।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপন বলছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের তিন অতিরিক্ত সচিব। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ সিটিতে প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছেন নিজ নিজ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনাররা। আর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হয়েছেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) মহাপরিচালক।

এদিকে পৌরসভাগুলোতে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকদের। কোথাও কোথাও সহকারী কমিশনারদেরও (ভূমি) পৌরসভার প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়েছে। সবগুলো উপজেলা পরিষদেই প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে নিজ নিজ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)।

অন্যদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও বরিশালে জেলা পরিষদের প্রশাসক হয়েছেন নিজ নিজ বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক)। বাকি ৫৩টি জেলাতেই জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের।

প্রশাসকদের নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে তারা এ দায়িত্ব পালন করবেন। বিধি অনুযায়ী তারা ‘দায়িত্ব ভাতা’ও পাবেন। এর বাইরে অন্য কোনো আর্থিক বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তারা প্রাপ্য হবেন না।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অপসারণ জেলা পরিষদ পৌরসভা প্রশাসক নিয়োগ মেয়র অপসারণ সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার স্থানীয় সরকার বিভাগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর