Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হেনস্তার শিকার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, ‘আওয়ামীপন্থি’দের পদত্যাগ দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ আগস্ট ২০২৪ ২৩:১৮

সোমবার ডিএনসিসি হাসপাতাল পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। সেখানে স্বাস্থ্য কর্মীরা বিক্ষোভ করছিলেন। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিনসহ ‘আওয়ামীপন্থি’ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনও তোপের মুখে পড়েন।

সোমবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বিক্ষোভকারীরা উপদেষ্টার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চান। তারা বলেন, উপদেষ্টাকে তারা সম্মান করেন। কিন্তু পরিস্থিতি তাদের ‘বাধ্য’ করেছে।

এর আগে রোববার (১৮ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক রোবেদ আমিন। তবে ডা. রোবেদ আমিনকে ‘স্বৈরাচার হাসিনার পক্ষের শক্তি’ উল্লেখ করে তাকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন ড্যাব সদস্যসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাধারণ চিকিৎসকরা। সোমবার সকালে রাজধানীর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে অবস্থান নিয়ে ড্যাব সদস্যরা বিভিন্ন দাবিও জানান।

এ দিন সকাল থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের ফটকে বিক্ষোভ করছিলেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ ‘আওয়ামীপন্থি’ চিকিৎসক, কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করেন। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা অফিসে ঢুকতে পারেননি। বেশির ভাগ কর্মকতার কক্ষে তালা দেখা গেছে। এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দাফতরিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল।

ডিএনসিসি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: সারাবাংলা

আন্দোলনকারীরা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনের বিরোধিতা করে রাজপথে মিছিল করছে। এ ছাড়া বিগত ১৬ বছর স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধা নিয়েছে। তাদের আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে অপসারণ ও তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করে বিচার দাবি করছি। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক চিকিৎসক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদায়ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমদুল কবির, অধ্যাপক ডা. বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া এবং নিপসম পরিচালক ডা. মো. শামিউল ইসলাম সাদীসহ ‘স্বৈরাচারের দোসর’ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি জানান তারা।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কিছু কর্মকর্তা আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দিতে বাধা দিয়েছেন। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে কোনো চিকিৎসক-কর্মচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, ওএসডি করে রাখা হয়েছে। যারা এসব করেছেন, তাদের পদত্যাগ করতে হবে।

ড্যাব স্বাস্থ্য অধিদফতর শাখার সভাপতি ডা. ফারুক বলেন, বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোবেদ আমিনকে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগের আদেশ মানেন না। তাই আমরা অধিদফতর ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছি। অধিদফতরে মহাপরিচালকের অফিসে তাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

সকাল ১১টার দিকে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মিছিল শুরু করেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। মিছিল নিয়ে তারা কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে যান। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম।

বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বিক্ষোভকারীরা ডিএনসিসি হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা হাসপাতালেও প্রবেশ করেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের সামনেই কিছুক্ষণ হট্টগোল করেন বিক্ষোভকারীরা। বিব্রত হন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। তৈরি হয় নিরাপত্তা ঝুঁকি। একপর্যায়ে সেখানে ছাত্রনেতারা উপস্থিত হয়ে সবাইকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

আখতার হোসেন বলেন, আপনাদের বিষয়টি আমরা বুঝতে পেরেছি। আপনাদের দাবির প্রতি আমাদেরও সমর্থন আছে। এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এখানে এভাবে আলাপ হতে পারে না।

তবে বিক্ষোভকারীদের দমাতে পারেননি ছাত্রনেতারা। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বিক্ষোভকারীরা উপদেষ্টার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চান। তারা বলেন, উপদেষ্টাকে তারা সম্মান করেন। কিন্তু পরিস্থিতি তাদের বাধ্য করেছে।

এ সময় স্বাস্থ্য উপদষ্টা নূর জাহান বেগম বলেন, আমাকে সম্মান করলে আপনারা এখানে এ ধরনের পরিবেশ তৈরি করতেন না। এরকম আচরণ করতেন না।

দুপুর বেলা পৌনে ১টার দিকে সবাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলে যান। তবে এ সময় তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম ডিএনসিসি হাসপাতাল ডিজি হেলথ রোবেদ আমিন স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর