ভিসি হতে দৌড়ঝাঁপ, দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ারি ইবি শিক্ষার্থীদের
২০ আগস্ট ২০২৪ ১২:১২ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৪ ১৩:১২
ইবি: অবিভাবকহীন হয়ে পড়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর একে একে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, ছাত্র-উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন। যার ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। দূর্বল হয়ে পড়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। এদিকে হল প্রশাসনও কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় প্রভোস্টরা হলে আসছেন না।
এদিকে বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার, হিসাব পরিচালকসহ অধিকাংশ আওয়ামীপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাই ক্যাম্পাসে আসছেন না। বিভিন্ন দফতরে জমা হয়েছে ফাইলের স্তুপ। যার ফলে ক্লাস-পরীক্ষা, ফল প্রকাশ, মূল সদন প্রদান, বেতন-ভাতা প্রদানসহ গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। এই অচল অবস্থা কাটাতে অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করে দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে দুর্নীতিবাজ ভিসি নিয়োগ হলে শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
একাধিক ডিন ও রেজিস্ট্রার জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী গত রোববার ক্লাস-পরীক্ষা চালুর কথা থাকলেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া পদত্যাগ করায় তা সম্ভব হয়নি। কারণ আন্দোলন চলাকালে সিন্ডিকেট সভা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ হয়েছে। সেই পদ্ধতিতেই খুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (ধারা-১১) অনুযায়ী উপাচার্য সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করতে পারেন। তাই ইবিতে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে শুরু হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই উপাচার্যসহ শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগ পেতে তদবির শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা। এর মধ্যে আলোচনায় থাকা শিক্ষকরা হলেন- হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মিজানূর রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নজিবুল হক, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আলীনূর রহমান ও আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী। তাদের সবাই বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠনের। এছাড়া, জামায়াতপন্থী কয়েকজন শিক্ষকও গোপনে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকেও কয়েকজন তদবির চালাচ্ছেন বলে তথ্য এসেছে।
আলোচনায় থাকা শিক্ষকদের অধ্যাপক মিজানূর রহমান চারবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বপালন করেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও আর্মেনিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। অধ্যাপক এমতাজ হোসেন বর্তমানে কলা অনুষদের ডিন ও জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। ইতোপূর্বে তিনি একবার শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। অধ্যাপক নজিবুল হক ইতোপূর্বে একবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইউট্যাব) শাখার সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সভাপতি ও একবার শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। অধ্যাপক মতিনুর রহমান বর্তমানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিয়া পরিষদ ভেঙে গঠিত সাদা দলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ইউট্যাব বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি একবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক আলীনূর রহমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এয়াকুব আলী ইতোপূর্বে একবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সৎ, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষাবিদকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক; যিনি হবেন শিক্ষর্থীবান্ধব। দলীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় নয় বরং শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট বলেন, আগের মত দলীয় লবিংয়ের মাধ্যমে যেন উপাচার্য নিয়োগ না হয়। দলীয় পরিচয়ের পরিবর্তে সততা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রত্যাশা করছি। ইতোপূর্বে অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি রহ বিভিন্ন অভিযোগ যাদের আছে এমন কাউকেউ আমরা চাই না। সরকারের কাছে দাবি, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অতীত দুর্নীতির রেকর্ড এবং একাডেমিক সততা ও দক্ষতা বিশ্লেষণ করা হোক।
তবে এ বিষয়ে শীর্ষ পদপ্রার্থীরা গণমাধ্যমে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা জানিয়েছেন, অনেকেই সিভি (জীবববৃত্তান্ত) জমা দিয়েছেন। সরকারে যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগ দেবেন। সৎ ও যোগ্য ভিসি নিয়োগ এমন প্রত্যাশা তাদেরও। যাদের হাত ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য শেখড়ে পৌঁছবে।
সারাবাংলা/ইআ