Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধান উপদেষ্টার কাছে মুনিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলার বিচার দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ আগস্ট ২০২৪ ২০:২৫

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ধর্ষণ ও হত্যার শিকার মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন তিনি।

নুসরাত বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্রয় না পেলে আনভীররা এত বেপরোয়া হয়ে ওঠার সাহস পেত না। এখন সরকারে রয়েছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। আরও রয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তারা দুজনেই অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ মানুষ। তাদের কাছে আমি আমার বোনের ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।

বিজ্ঞাপন

মুনিয়া হত্যার বিচার চেয়ে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। নিজেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, পিবিআইতে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) যখন মামলাটি ছিল, সেখানেও টাকা ঢেলে তৎকালীন পিবিআইপ্রধান বনজ কুমারের মুখ বন্ধ করে একটি একপেশে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আসে বসুন্ধরা গ্রুপ। ওই প্রতিবেদনে আনভীরসহ সবাইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমি নারাজি জানালে সেটিও আদালতে খারিজ করে দেওয়া হয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করে নুসরাত বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েও ডেইলি স্টার, মানবকণ্ঠ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, আরটিভি, গ্রিনটিভি ইত্যাদি গণমাধ্যম সোচ্চার কণ্ঠে আমার বোনের বিষয়টি দেশবাসীকে জানিয়েছে। অন্যরাও যতটাসম্ভব নিউজ করেছে। বিশেষ করে প্রবাস থেকে নাগরিক টিভি যে ভূমিকা রেখেছে, তাদের কাছেও আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই হাসিনা আক্তারকে তার টেবিলটক অনুষ্ঠানের অন্য, যেখানে আমাকে বেশ কয়েকবার কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চেয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। ছবি: সারাবাংলা

মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার কথা তুলে ধরে তার বোন নুসরাত বলেন, মুনিয়াকে মেরে ফেলার খবর পাওয়ার পর আমি যখন গুলশান থানায় মামলা করতে যাই, এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তখন বসুন্ধরা গ্রুপ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকেই কিনে ফেলতে চেয়েছিল। আনভীরকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও গুলশান থানার ওসি সুদীপ কুমার নির্লজ্জ ভূমিকা রেখেছিলেন। পরে গুলশান থানা আনভীরকে অব্যাহতি দিয়েই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

নুসরাত বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারের একজন সন্তান। আমার প্রয়াত বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং তিনি কুমিল্লাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবেই যুক্ত ছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আমি আমার বোনের হত্যার বিচার দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ন্যায় বিচার পাইনি। আমি জানতে পারি, তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বান্ধবী তৌফিকা করিমকে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আনভীরের থেকে ঘুষ নিয়ে মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।

নুসরাত আরও বলেন, আমি এসব ব্যাপার নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য একাধিকবার আবেদন করেছি। প্রায় ২৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি আমাকে সাক্ষাৎ দেননি। আমরা দেখেছি, ছাত্র গণহত্যার সময়েও তিনি ভবন ও অবকাঠামোর ক্ষতি দেখতে যান, অথচ ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার সময় তার হয়ে ওঠে না। একইভাবে তিনি খুনি আনভীর ও শাহ আলমের সঙ্গে ঠিকই দেখা করেছেন। আপনারা নিশ্চয়ই আনভীরের ফেসবুকে মাসখানেক আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের কিছু ছবিও দেখেছেন। অথচ আমার সঙ্গে একটিবার সাক্ষাতের সময় হয়ে ওঠেনি শেখ হাসিনার।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মামলা সর্ম্পকে আমাদের নারাজি পিটিশন খারিজের পর নাগরিক টিভির নাজমুস সাকিবের প্রতিবেদনটি দেখেছেন। সেই প্রতিবেদনে নাজমুস সাকিব কিছু অডিও রেকর্ড ফাঁস করেন, যা থেকে প্রমাণ হয়ে যায় পুলিশ-প্রশাসন-আদালত সবাই প্রভাবিত হয়েছিল। এভাবে মুনিয়া হত্যা ও ধর্ষণ মামলা নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ও আদালতের রায় আওয়ামী আমলের বিচারহীনতার সংস্কৃতিরই একটি নির্লজ্জ উদাহরণ।

নুসরাত বলেন, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো— মুনিয়া অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পিবিআইও তাদের তদন্তে বলেছে, সেটা ছিল আনভীরেরই সন্তান। অথচ সেই আনভীরকে তারা জখম স্যাম্পল টেস্ট করতে বলল না। তারা মামলার অন্যান্য আসামি, যেমন— সাইফা মিম ও পিয়াসাকে গ্রেফতার করলেও আনভীরকে একবারের জনাও গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। এত অন্যায় ও অবিচারের পরও আমি আনভীরদের হুমকি, টাকা ও প্রলোভনের কাছে বিক্রি হইনি। আমি হালও ছেড়ে দিইনি। মামলা এখনো চলমান আছে। আমি বিশ্বাস করি, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর এখন এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করতেই পারি।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নুসরাত জাহান বলেন, ‘মামলা আপস করতে ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল আনভীর। মুনিয়াকে খুন না করলে কেন টাকার প্রস্তাব দিয়েছে?’ নুসরাত বলেন, সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। মেরে ফেললেও তিনি বিক্রি হবেন না বলেও জানান।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

আনভীর মুনিয়া হত্যা মুনিয়াকে ধর্ষণ মোসারাত জাহান মুনিয়া সায়েম সোবহান আনভীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর