খাগড়াছড়ি: টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার ৯ উপজেলাতেই বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। পানির স্রোতের তোড়ে ও পাহাড় ধসে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। সেতু ও সড়ক ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। আক্রান্তরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উঠে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সব উপজেলাতেই প্লাবন দেখা দিলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিঘীনালা, মাটিরাঙা, খাগড়াছড়ি সদর, মহালছড়ি ও পানছড়ি উপজেলার নিন্মাঞ্চলের মানুষ। সব মিলিয়ে ৯ উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ হাজারেরও বেশি পরিবার।
গত কয়েক দিন ধরেই খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি নাজুক। বুধবারও (২১ আগস্ট) সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। তাতে নদী ও ছড়ার পানি বাড়তে থাকার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাটও। অনেক স্থানে সড়ক ভেঙে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছবি: সারাবাংলা
পানি বেড়ে যাওয়ায় উপচে পড়েছে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদী। তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল থেকে পানি সরে যাওয়ার সুযোগও হয়নি। এখনো ডুবে আছে বটতলী চাকমা পাড়া, মুসলিমপাড়া, মেহেদীবাগ, কালাডেবা, রুইখই চৌধুরীপাড়া ও খবং পুড়িয়াসহ নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী কয়েক শ পরিবার।
দিঘীনালা উপজেলার ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম, পানছড়ি উপজেলার ১৮টি গ্রাম, মাটিরাঙা উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম এবং মহালছড়ি উপজেলার ১৮ থেকে ২০টি গ্রামের অবস্থাও একই। এসব গ্রামের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে মহালছড়ি উপজেলার সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সিঙ্গিনালা গ্রামের কাপ্তাই পাড়া এলাকায় একমাত্র সড়কে সেতুর সংযোগ সড়কটি ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। টানা বর্ষণ ও বন্যায় মঙ্গলবার ভোরের দিকে সংযোগ সড়কটি ভেঙে যায়। ৪০ বছরের পুরানো এই জরাজীর্ণ সেতুর কারণে সেতুর সংযোগ সড়কের দেয়াল ধসে সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে বলে জানান এলাকাবাসীরা।

ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেককে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হয়েছে। ছবি: সারাবাংলা
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি খাগড়াছড়ি ইউনিটের সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ জানান, যুব রেড ক্রিসেন্ট খাগড়াছড়ি ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকরা সরকারি ত্রাণ বিতরণ কাজে সহযোগিতা করছেন। এদিকে রেড ক্রিসেন্ট সদর দফতরে জরুরি ত্রাণ বরাদ্দের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে, বুধবার বন্যা কবলিত ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত খাগড়াছড়ি পৌরসভার মোট আড়াই হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুইয়া জানান, প্রায় ১০ হাজার পরিবারের মাঝে তারা খাবার বিতরণ করেছেন, যা অব্যাহত রাখবেন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, বন্যা ও পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের জন্য খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় ১৮টিসহ পুরো জেলায় ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আশ্রয় নেবেন, তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি জেলা প্রশাসনের রয়েছে।