Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডুবে গেছে ১৩১ গ্রাম, বন্যার্ত ৩ লক্ষাধিক মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২৪ ২৩:১৪

ফেনীতে বন্যায় তলিয়ে গেছে তিন উপজেলার ১৩১টি গ্রাম। ছবি: সারাবাংলা

ফেনী: প্রবল বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। পানি বিপৎসীমা পেরিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিন ফুটেরও বেশি ওপর দিয়ে। সেই পানি ছড়িয়ে পড়ছে ফেনীর গ্রাম থেকে গ্রামে। একে একে প্লাবিত হয়েছে তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ১৩১টি গ্রাম। স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যার মুখে তিন লাখেরও বেশি মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে বন্যায় ডুবে গেছে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হওয়ায় পানিবন্দি মানুষদের খোঁজখবরও নিতে পারছেন না স্বজনরা। এর মধ্যেও সেনাবাহিনী ও পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় চলছে বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রম।

বিজ্ঞাপন

ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর থেকে সেনাবাহিনীর ছয়টি বোট ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। আরও ছয়টি বোট অংশ নেবে উদ্ধারকাজে, যুক্ত হবে কোস্টগার্ডও। সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অভিযান শুরু করতে পারছে না।

আরও পড়ুন- ফের বন্যা, মারিশ্যা-বাঘাইহাট সড়কের ৩ স্থানে পাহাড় ধস

স্থানীয়রা বলছেন, তিন দিনের টানা প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল যুক্ত হয়ে ফেনীতে এই ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। এসব গ্রামের ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সড়কগুলোও সব এখন পানির নিচে। তিন উপজেলার রোপা আমন আর সবজির ক্ষেতগুলোর কোনোটিই ভেসে নেই।

বিজ্ঞাপন

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, বুধবার সকালে ফেনীতে মুহুরী নদীর পানি পরশুরাম ও ফুলগাজী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মুনীর হোসেন জানালেন, বন্যার এ অবস্থার উন্নতি শিগগিরই হবে না। কারণ বৃষ্টিপাত ক্রমেই বাড়ছে। বুধবার সকাল ৯টার তথ্য বলছিল, আগের ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টার তথ্য বলছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৩১২ মিলিমিটার, যা এই সময়ে সারা দেশের সর্বোচ্চ।

তিন উপজেলার প্রায় সব সড়কই এখন পানির নিচে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিন লাখের বেশি মানুষ। ছবি: সারাবাংলা

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবারও (২২ আগস্ট) বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ স্থানে। আর বৃহস্পতিবারও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা আগে থেকেই জারি রয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনগুলোর তথ্য বলছে, ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৬১টির গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ও পৌর শহরসহ ৫০টির বেশি গ্রাম এখন পানির নিচে। আর ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠান নগর, রাধানগর ও শুভপুর ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি— সবখানেই থই থই করছে পানি। তাতে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

ফুলগাজী উপজেলার কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা কবলিত গ্রামগুলোর প্রায় বসতঘরেই পানি উঠেছে। এর মধ্যে নিম্নাঞ্চলে ঢলের পানি কোনো কোনো ঘরের ছাদ বা চাল পর্যন্ত ছুঁয়ে গেছে। মানুষের ন্যূনতম আশ্রয় নেওয়ার অবস্থাও নেই। বাকি দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চলের পরিস্থিতিও একই— এমনটিই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন- শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, খাগড়াছড়িতে পানিবন্দি ১০ হাজার পরিবার

পরশুরামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা ও ফুলগাজীর ইউএনও তানিয়া ভূঁইয়া জানান, তাদের দুই উপজেলা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত। উপজেলার প্রায় সব মানুষ বন্যাকবলিত। বুধবার সকাল থেকেই তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবকরা। পরে সেনাবাহিনী বন্যায় আক্রান্তদের উদ্ধারের কাজে যোগ দিয়েছে। কাজে যুক্ত হচ্ছে কোস্টগার্ডও। সীমান্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ করছে বিজিবি।

ফেনীস্থ ৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে বিজিবি নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। তাদের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত বিজিবির উদ্ধার তৎপরতা ও সহায়তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, সব ধরনের বাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় আমরা বন্যার্তদের উদ্ধারে যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছি। বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের মজুত রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো বিতরণ করা হবে।

সারাবাংলা/টিআর

ফেনী ফেনীতে বন্যা বন্যা মুহুরী নদী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর