ভারত যেকোনো মুহূর্তে গণহত্যা করতে পারে: ফরহাদ মজহার
২১ আগস্ট ২০২৪ ২৩:৩৯
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনায় নিযুক্ত হলেও এখনো নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে বলে বিএনপিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কবি, চিন্তাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেন, বিএনপিকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ভারত জানে যে শেখ হাসিনাকে যেকোনো সময় বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে খুনি হিসেবে চাইতে পারে বাংলাদেশ। চাইলে তারা দিতেও বাধ্য। ১৫ ও ২১ আগস্ট গণহত্যার পরিকল্পনা ছিল, রুখে দেওয়া গেছে। কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে ভারত এখানে গণহত্যা করতে পারে। তাই নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা যাবে না।
বুধবার (২১ আগস্ট) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্য বিএনপির কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট রাতে শপথ নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওই দিনই দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় সমাবেশ করে বিএনপি। বিএনপি নেতারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনও দাবি করেছেন।
বিএনপির এ ধরনের আচরণের কঠোর সমালোচনা করেন ফরহাদ মজহার। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সমাবেশ থেকে ভুল বার্তা গেছে। তিন মাসের মধ্যে কেন নির্বাচন চাইলেন? কেন সমাবেশ করলেন? আপনাদের উদ্দেশ্যটা কী? এরই মধ্যে এমন কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যেন বিএনপি ক্ষমতায় চলে এসেছে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি কিন্তু এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে ঠেকাতে পারেনি। তারা ছাত্রদের পেছনে ছিল। ছাত্রদের প্রতি তারা কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে। কিন্তু লন্ডন থেকে বিভ্রান্তিকর বার্তা দিলে তরুণদের ক্ষতি হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন গঠনতন্ত্র গঠন পর্যন্ত বিএনপিকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের মধ্যেই আছে। কিন্তু এখন দলকে সামনে আনা যাবে না। আগে রাষ্ট্র গোছাতে হবে। শত্রু মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমানে সংবিধান আছে, এর জন্য লড়াই হয়নি। সংবিধান উৎখাত করার জন্যই লড়াই হয়েছে। যারা এই আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন, তাদের সেই মনের কথা লেখা হওয়া পর্যন্ত সরকারকে সময় দিতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্র তৈরি হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। রাজনৈতিক দল কীভাবে নির্বাচনে আসবে, সেই গঠনতন্ত্র তৈরি হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের দাবি তোলা যাবে না।
বিএনপিতে বিভক্তি রয়েছে উল্লেখ করে সেগুলো দলের মধ্যেই রাখার আহ্বান জানান ফরহাদ মজহার। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে তাকে বুঝিয়ে বলতে চান বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন জরুরি উল্লেখ করে এই চিন্তাবিদ বলেন, এখনো শেখ হাসিনার সংবিধান চালুর চেষ্টা চলছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাই তাকে জনগণের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতির স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা এ বিপ্লবে অংশ নিয়েছেন, তাদের একটি জাতীয় কাউন্সিল করতে হবে। সেখানে বিএনপিও থাকবে। সেখানে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন হবে। বিএনপির প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সেই গঠনতন্ত্র তৈরি হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করা।
সেমিনারে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ এ বিপ্লব, এ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে। ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ, তিতীক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে এক নবযুগের সূচনা হয়েছে। বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা বৃথা যায়নি, বৃথা যাবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এক বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হবে উল্লেখ করে সাবেক এই ঢাবি উপাচার্য বলেন, একটি স্থিতিশীল ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সরকারব্যবস্থা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, গণমুখী শিক্ষানীতি তৈরি, দুর্নীতি দূর করা— এগুলো বর্তমান সরকারের প্রধান প্রধান কাজ।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ মাসুম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদারসহ অন্যরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
গণঅভ্যুত্থান ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী প্রতিবাদী নাগরিক সমাজ ফরহাদ মজহার