কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি, থামতে পারে ভারী বৃষ্টিপাত
২৩ আগস্ট ২০২৪ ১৩:২৪
ঢাকা: দেশের ১১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে উন্নতির লক্ষণ নেই। তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। দফতরটি বলছে, বন্যাকবলিত পূর্ব, দক্ষিণপূর্ব ও উত্তরপূর্ব অঞ্চলে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এসব এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও দেখছে না কেন্দ্র। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করবে।
প্রবল বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে মঙ্গলবার থেকে বন্যা দেখা দেয় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায়। বৃষ্টি না কমলে এবং উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে একে একে বন্যায় আক্রান্ত হয় ১১টি জেলা। চট্টগ্রাম বিভাগের বন্যাকবলিত আট জেলা হলো— ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি। আর সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত তিন জেলা হলো— সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালের তথ্য বলছে, দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল ধীর গতিতে কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি। উজানের নদ-নদীর পানি সমতলও কমতে শুরু করেছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীর গতিতে উন্নতি হচ্ছে।
আরও পড়ুন-
- খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি
- বন্যায় ৪০ উপজেলায় সহায়তা দিচ্ছে ১২০০ মেডিকেল টিম
- বন্যার্তদের সহায়তায় কাজ করবে স্থানীয় সরকারের সব দফতর
- গোমতী নদীর বাঁধে ভাঙন, কুমিল্লার ২ উপজেলায় প্লাবনের শঙ্কা
- ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি, সারাদেশে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস
- এখনো ডুবে আছে কুমিল্লা-ফেনী, নোয়াখালীতে সূর্যের দেখা ৮ দিন পর
- রাজধানীতে ঝুম বৃষ্টি, সারাদেশে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস
বন্যা পূর্বাভাস ও সকর্কীকরণ কেন্দ্রের শুক্রবারের (২৩ আগস্ট) তথ্য বলছে, মৌলভীবাজারের ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে মনু নদী রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর ও মৌলভীবাজার পয়েন্টে ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দুটি নদীতেই গত ২৪ ঘণ্টায় পানি সমতল কমেছে।
বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে গোমতী, ফেনী, হালদা, খোয়াই, কুশিয়ারা নদীও। এর মধ্যে হালদা নদী নারায়ণ হাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার, ফেনী নদী রামগড় পয়েন্টে ২০০ সেন্টিমিটার, গোমতী নদী কুমিল্লা পয়েন্টে ১১৮ সেন্টিমিটার, খোয়াই নদী বল্লা পয়েন্টে ১৯৯ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদী অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তথ্য আরও বলছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
গত ২৪ ঘণ্টার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময়ে কুশিয়ারা, মানু, খোয়াই, সুরমা, সারিগোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি কমেছে। তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা গোমতী, মেঘনা, ফেনী ও হালদা নদীর পানি এ সময়ে বেড়েছে। ফেনী সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় মুহুরী নদীর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য তুলে ধরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল ও সংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তরপূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
সরদার উদয় রায়হান বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল এবং সংলগ্ন উজানেও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল কমছে এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল, যে পরিস্থিতি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতলও কমছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এ সব নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
নদীর পানি পাউবো বন্যা বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র বিপৎসীমা