বৃষ্টি থেমেছে চট্টগ্রামে, বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত
২৩ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে বৃষ্টি কমলেও বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত। তবে কয়েকটি স্থানে পানি নামতে শুরু করেছে। অন্তত তিন উপজেলায় তিন লাখের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। কিছু কিছু এলাকায় এখনও লোকজন পানিবন্দি হয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে। উপদ্রুত এলাকায় পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী নাজিরহাট পুরনো ব্রিজ ও নতুন ব্রিজের মাঝামাঝি জায়গায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন ও ফটিকছড়ির নাজিরহাটসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম জেলা ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত বন্ধ আছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকেই আকাশ খানিক মেঘাচ্ছন্ন ছিল, তবে দুপুরে রোদও দেখা গেছে।
আরও পড়ুন- বন্যাকবলিত চট্টগ্রামে ৫ প্রাণহানির তথ্য প্রশাসনের
স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ার পর চট্টগ্রামের উপদ্রুত তিনটি উপজেলার মধ্যে সীতাকুণ্ড, মীরসরাই ও ফটিকছড়ির একাংশে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে জোয়ারের সময় পানি আবারও বেড়ে গিয়ে লোকালয় প্লাবিত হয়ে পড়ে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় বন্যায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৫০ হাজার ৭০৬টি। দুই লাখ ৬২ হাজার ৪০০ জন মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বন্যায় মীরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলার ৫৯০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১২৫টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৬৫টি নলকূপ ও এক হাজার ৫৩৭টি ল্যাট্রিন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সাদি উর রহিম জাদিদ সারাবাংলাকে জানান, জেলা প্রশাসন থেকে চট্টগ্রামে ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৯ হাজার ৬৭ জন কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় চিকিৎসা দিতে ১০৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে এক হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চাল ও ৩৫ লাখ টাকা মজুত আছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জন্য ৯০৫ মেট্রিক টন চাল ও ২৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মজুত আছে। এর মধ্যে ৩৯৫ মেট্রিক টন চাল ও ৯ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি শুকনো খাবারও দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমুন নবী সারাবাংলাকে জানান, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা কাজ করছে। মীরসরাই উপজেলায় ৫০টি এবং ফটিকছড়িতে ১০টি উদ্ধারকারী নৌযান উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে জানান, উপজেলায় কিছু স্থানে পানি কমতে শুরু করলেও বেশির ভাগ স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। এর মধ্যে বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়নহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। পাইন্দং, ভুজপুর, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি, সমিতির হাট, ভক্তপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।
ইউএনও আরও বলেন, ‘পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকার পরও পানি বেশি হওয়ায় কয়েকটি স্থানে আমরাদের ত্রাণ পৌঁছাতে কষ্ট হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ স্থানে পৌঁছানো হচ্ছে।’
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চট্টগ্রামে অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, মীরসরাই ও হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা। ফটিকছড়ির ইউএনও মোজাম্মেল বলেন, ‘দাঁতমারা, নারায়নহাট ও ভুজপুরে ইউনিয়নের এক শিশুসহ তিনজনের মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। তারা বানের পানিতে ভেসে গিয়েছিল।’
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রনি (১৭) বাঁশের ভেলা নিয়ে বিলে নেমে নিখোঁজ হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই বিল থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
এদিকে শুক্রবার সকালে হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ইউসুফ চৌধুরীর বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জিয়াউর রহমান সাকিব (২২) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। সকালেই মীরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি এলাকায় পানিতে ভাসমান অবস্থায় এক অজ্ঞাত তরুণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের সঙ্গে বৈদ্যুতিক তার জড়িয়ে থাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
সারাবাংলা/আইসি/টিআর
চট্টগ্রাম টপ নিউজ ফটিকছড়ি বন্যা বন্যা পরিস্থিতি মীরসরাই হাটহাজারী