পালানোর চেষ্টায় ব্যস্ত শতকোটি টাকার মালিক আ.লীগ নেতা রিয়াজ
২৩ আগস্ট ২০২৪ ২৩:২৮ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪ ০০:৪৪
ঢাকা: শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে দেশ ছাড়তে পেরেছেন, আবার অনেকেই চেষ্টা করছেন পালিয়ে যেতে।
এর মধ্যে একজন হলেন, মুকসুদপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ মিনা। শত কোটি টাকার মালিক রিয়াজ মিনা আগামীকাল ২৪ আগস্ট দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। পুলিশ, পারিবারিক এবং গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগ সূত্রে তার সপরিবারে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।
গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদাবাজি, পুলিশের নিয়োগ বদলি, টেন্ডারবাজি করে শতশত কোটি টাকার মালিক রিয়াজ মিনা। তিনি সবসময় নিজেকে শিল্পপতি পরিচয় দিতেন। এর বাইরে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে শিল্পপতি পরিচয় দিলেও কিন্তু বাস্তবে নেই তার কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান। তদবির বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করে হয়েছেন কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক। সাভারের আমলায় রয়েছে তার ১০তলা একটি বিলাসবহুল বাড়ি। রয়েছে হেরিয়ারসহ ৩টি গাড়ি, যার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। গত ২০১৪ সালের ৯ মার্চ রাজধানীর সাভারে ঝুটের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে অস্ত্রসহ একবার আটকও হয়েছিলেন রিয়াজ মিনা।
এছাড়াও রয়েছে সাভার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে আমতলায় ১টি ১০তলা বাড়ি, যার অনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ জেলার টেকেরহাটে রয়েছে ২ কোটি টাকার সম্পদ। আমেরিকায় রয়েছে ১টি বাড়ি।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর থেকে এই আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজ মিনার দেশত্যাগের পরিকল্পনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছেন। আগামী ২৪ আগস্ট রাতে সপরিবারে পালিয়ে আমেরিকায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগে রয়েছে, রিয়াজ তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনার চাচাতো ভাই। তার মাধ্যমে তদবির বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করে হয়েছেন অবৈধ সম্পদের মালিক। ২০১৪ সালের আগে তিনি যুবলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে বিপুল অর্থের বিনিময়ে বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন।
২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়তের আন্দোলনের সময় নিজের গাড়ি নিজেই পুড়িয়ে শেখ হাসিনার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকাও নেন রিয়াজ। আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেই ছবি দেখিয়েই তিনি বিভিন্ন সেক্টরে করেন চাঁদাবাজি ও টেন্ডার বাজি।
পাশাপাশি গোপালগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ফারুক খানও ছিল তার অতি কাছের। তার ক্যাশিয়ার হিসাবেও কাজ করতেন রিয়াজ। ফারুক খান বাণিজ্যমন্ত্রী থাকার সময় টিসিবির মালামাল আনার অনুমতি নিয়েও মাল বিদেশ থেকে না এনে টাকা হাতিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ ছিল।
২০১৪ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জড়িত থেকে একই সালের ৯ মার্চ সাভার আশুলিয়ায় ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ডিইপিজেড) অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক হন। রিয়াজের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় হলেও ২০১১ সালে তিনি আশুলিয়া থানা এলাকার ঠিকানায় অস্ত্রের লাইসেন্স করেন। স্ত্রীর চাকরির সুবাদে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতেন।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে বৃহস্পতিবার থেকে একাধিকবার রিয়াজ মিনার মোবাইল নম্বরে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ওই নম্বরে এসএমএস দিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তার একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল ও মেসেজ দিয়েও উত্তর পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাচাইবাছাই ছাড়া বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ক্রস করে বাংলাদেশ থেকে কেউ পালাতে পারবেন না। অপরাধে জড়িত থাকলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে।’
সারাবাংলা/ইউজে/এমও