বৃষ্টির সঙ্গে কমেছে সব নদীর পানি, উজানেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
২৩ আগস্ট ২০২৪ ২৩:৫৫
ঢাকা: ১১ জেলায় ছড়িয়ে পড়া আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত কমেছে বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকাতেই। কোথাও কোথাও বৃষ্টি থেমেই গেছে। পাশাপাশি সকালের পর থেকে দেশের সব নদীতেই পানির সমতল কিছুটা করে হলেও নেমে এসেছে। একই সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকার উজানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কমতে থাকার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। তৃতীয় দিনে গিয়ে বৃষ্টিপাত কিছুটা বাড়তে পারে বলে আভাস রয়েছে। তবে উজানের তথ্য ও সার্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যার তথ্য বলছে, এ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যেকার সময়ে দেশের পূর্ব, উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের প্রায় সব নদীতেই পানি কমেছে। এ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি কমেছে স্থানভেদে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত।
একই সময়ে মনু নদীর পানি কমেছে ৩ সেন্টিমিটার, ধলাই নদীর পানি কমেছে ৫১ সেন্টিমিটার, খোয়াই নদীর পানি কমেছে ৪০ থেকে ৫১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। সবচেয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় গোমতী নদীর পানি কুমিল্লা পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও দেবিদ্বার পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার কমেছে। মুহুরি নদীর তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ফেনী নদীতে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি কমেছে। এই সময়ে কেবল ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে হালদা নদীর পানি।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় ত্রিপুরার অনেক এলাকা থেকেই বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতর ত্রিপুরার চার জেলায় আগামী তিন দিন অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিলেও পরে সতর্কতার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার দুটি এলাকায় আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও রাজ্যের অন্যান্য এলাকায় কেবলই বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে তারা।
কিছুটা ইতিবাচক খবর মিলেছে আবহাওয়া অধিদফতর থেকেও। আগামী ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কমার প্রবণতা দেখছেন তারা। শুক্রবার সন্ধ্যার তথ্য বলছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ঈশ্বরদীতে— ১৭৬ সেন্টিমিটার। সে তুলনায় বন্যাকবলিত এলাকায় বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমে এসেছে। এই সময়ে চট্টগ্রামে ৭ সেন্টিমিটার, রাঙ্গামাটিতে ২ সেন্টিমিটার, চাঁদপুরে ৬ সেন্টিমিটার, মাইজদী কোর্টে ৬ সেন্টিমিটার, সীতাকুণ্ডে ৫ সেন্টিমিটার, বন্দরবানে ৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তুলনামূলকভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী এলাকায়। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৩৭ সেন্টিমিটার, লক্ষ্মীপুরে ৭৫ সেন্টিমিটার, সন্দ্বীপে ৫৫ সেন্টিমিটার, হাতিয়ায় ৬৩ সেন্টিমিটার ও টেকনাফে ৩৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান শুক্রবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কমতে থাকবে। এরপর তৃতীয় দিনে গিয়ে বৃষ্টিপাত কিছুটা বাড়লেও এরপর আবার কমতে থাকবে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই মূলত গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে সারা দেশে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি কমলেও সার্বিকভাবে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত থেকে যাবে বলে জানান হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, অক্টোবরের শুরুর দিকে মূলত মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দেশের ওপর থেকে পুরোপুরি কেটে যেতে থাকে। এ বছরও তেমনটিই হবে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে হয়তো বৃষ্টিপাত দেশের উত্তরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাত ও নদীর পানির স্তর কমে আসায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি দেখছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের প্রোগ্রামার এম এন তারেক সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতর থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে বাংলাদেশসহ উজান তথা ভারতের ত্রিপুরাতেও বৃষ্টি কমে আসতে থাকবে। এরই মধ্যে শুক্রবার দেশের প্রায় সব নদীতেই পানি কমেছে। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাত থাকলে আগামী তিন দিনে নদীর পানি আরও কমতে থাকবে। বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য বলছে, দেশের ১১টি জেলা আকস্মিক এই বন্যার কবলে পড়েছে। এতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন। এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিত হয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যবিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলো হলো— ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। এসব জেলার ৭৭টি উপজেলার ৫৮৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। ১১ জেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯টি।
বন্যায় যে ১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তাদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, দুজন নারী। কুমিল্লায় চারজন, চট্টগ্রামে চারজন কক্সবাজারের তিনজন মারা গেছেন। একজন করে মারা গেছেন ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য আরও বলছে, এখন পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকায় তিন হাজার ১৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ ৯৫ হাজার ৩০ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় পেয়েছে ১৮ হাজার ৯৬টি গবাদিপশুও।
তথ্য বিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, ১১টি জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে কাজ করছে ৬৩৯টি মেডিকেল টিম। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়গুলো থেকে তিন কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার টাকা নগদ ও ১৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর
আবহাওয়া অধিদফতর ত্রিপুরায় বন্যা নদীর পানি বন্যা বন্যা পরিস্থিতি বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বন্যাদুর্গত এলাকা বৃষ্টির পূর্বাভাস