‘আন্দোলনে হতাহতে ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত এ সপ্তাহেই শুরু হবে’
২৫ আগস্ট ২০২৪ ২১:৩১
ঢাকা: জুলাই-আগস্ট মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের দাবিতে রূপ নেওয়া ছাত্রজনতার আন্দোলনে অন্যায্যভাবে বলপ্রয়োগ ও প্রাণহানির ঘটনার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে গণঅভ্যুত্থানে বলপ্রয়োগ ও হতাহতের যে দুঃসহ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার স্বচ্ছ তদন্ত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তদন্তের এই প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই শুরু হবে। তাদের প্রথম দল এরই মধ্যে এসে গেছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে যে শত শত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তার অধিকাংশ আমরা এরই মধ্যে প্রত্যাহার করেছি এবং আটক ছাত্র-জনতার মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছি। পর্যায়ক্রমে মিথ্যা ও গায়েবি সব মামলার ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে দুঃসহ ভোগান্তি থেকে মুক্ত করা হবে।
আরও পড়ুন-
- সব দাবি পূরণ হবে— ধৈর্য ধরতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা
- কখন নির্বাচন হবে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের নয়’
- নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ, সবার সহায়তা কামনা প্রধান উপদেষ্টার
- কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত না করতে পারে: ড. ইউনূস
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার স্মৃতি ধরে রাখতে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। বলেন, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে গণঅভ্যুত্থানে সব শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সব আহত শিক্ষার্থী ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার ‘জুলাই গণহগত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আপনাদের সবার ও বিদেশে অবনস্থানরত ভাই-বোনদের অনুদান এ প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, আন্দোলনে আহত সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেৃতত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রতিনিধিত্বকারী দুই উপদেষ্টার সহায়তায় পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, তিনি নিজে জুলাই গণহগত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদ গ্রহণ করেছেন।
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা গুম হয়েছে, যারা হত্যার শিকার হয়েছে, তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে। তাদের পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। তাদের জীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। আমি সব দেশরক্ষা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের ওপর জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং করে যাচ্ছি। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ গঠনের জন্য সব ধরনের আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তার জন্য তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদের কাছে আমাদের প্রস্তাব প্রণয়ন করে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের অনুরাধ জানিয়েছি, তারা যেন পরিস্থিতির কারণে অতি দ্রুত অর্থছাড় করার ব্যবস্থা নেয়। তাদের বলেছি, যে অববস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তা যেমন একটি দুর্যোগপূর্ণ সময় তেমনি জাতির সামনে একটি মস্ত বড় সুযোগ। এ সুযোগ যেন আমরা পূর্ণ কাজে লাগাতে পারি। এ জন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।
সারাবাংলা/টিআর