জাতির উদ্দেশে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা [পূর্ণাঙ্গ ভাষণ]
২৫ আগস্ট ২০২৪ ২৩:৪৩
ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর দুই সপ্তাহ পর এসে ফের তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে জনগণের পক্ষ থেকেই সরকারের কাজের ধরণ ও করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা চেয়েছেন তিনি।
ভাষণে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে সরকার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার এক সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম যে বৈষম্যহীন, নিপীড়নমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেল স্বপ্ন দেখে তা পূরণ করতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ জন্য সবাইর সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
রোববার (২৫ আগস্ট) রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে।
ভাষণের শুরুতেই ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে স্বৈরাচার পতনের পর নতুন বাংলাদেশে সবাইকে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা। ভাষণে সেই নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত না করতে পারে।
আরও পড়ুন-
- সব দাবি পূরণ হবে— ধৈর্য ধরতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা
- কখন নির্বাচন হবে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের নয়’
- নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ, সবার সহায়তা কামনা প্রধান উপদেষ্টার
- ‘আন্দোলনে হতাহতে ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্ত এ সপ্তাহেই শুরু হবে’
- কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত না করতে পারে: ড. ইউনূস
দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির শিকার যারা, তাদের কথাও স্মরণ করেন ভাষণে। বন্যা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি। সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
এরই মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠী, মহল, সম্প্রদায় থেকে শুরু সংগঠন, সংস্থাগুলোও নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে নতুন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। ড. ইউনূস তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, সরকারকে কাজ করতে দিলে সবার সব দাবি-দাওয়াই পূরণ হবে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও বলপ্রয়োগের স্বচ্ছ তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে আমন্ত্রণের কথা জানান ড. ইউনূস। বলেন, এ সপ্তাহেই জাতিসংঘের তদন্ত দল কাজ শুরু করবে।
ভাষণে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলকে ফ্যাসিবাদি ও স্বৈরাচারি হিসেবে অভিহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, এই সময়ে দেশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করার এক কঠিন চ্যালেঞ্জ অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে। তবে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে বদ্ধপরিকর জানিয়ে সবাইকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
শিক্ষা খাত থেকে শুরু করে আর্থিক খাত, নির্বাচনব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, স্বাস্থ্য খাত, প্রবাসী কল্যাণ, রেমিট্যান্স, রোহিঙ্গা— সব খাত ও বিভাগকেই সংস্কারের আওতায় আনার প্রত্যয়ের কথা জানান ড. ইউনূস। বলেন, সার্বিকভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তার সরকারের প্রত্যেক উপদেষ্টা নিজেদের নিবেদন করেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে। তিনি বলেন, ছাত্রজনতা যতদিন চাইবে ততদিনই এই সরকারের মেয়াদ থাকবে। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো মুহূর্তে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত থাকবে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক, তা রাজনৈতিকভাবেই আসতে হবে। সরকারের তরফ থেকে মেয়াদ বাড়ানোর কোনো চেষ্টা করবেন না— এমন প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া সম্পূর্ণ ভাষণটি পড়ুন এখানে—
সারাবাংলা/টিআর
অন্তর্বর্তী সরকার জাতির উদ্দেশে ভাষণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস