Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পানি নামলেও রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ আগস্ট ২০২৪ ২০:০৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বন্যায় আক্রান্ত বেশির ভাগ এলাকায় পানি নেমে গেছে। তবে পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি মানুষের। বন্যার পানি সবখানে রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। এতে প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী নাজিরহাট পুরনো ব্রিজ ও নতুন ব্রিজের মাঝামাঝি জায়গায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন ও ফটিকছড়ির নাজিরহাটসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পরদিন শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত থেকে পানি নামতে শুরু করলেও নিম্নাঞ্চলের এলাকার মানুষরা এখনও আছেন দুর্ভোগে।

 

পানিতে অনেক ঘর-বাড়িই বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে অনেকের স্বপ্ন। অনেকে ক্ষত মেরামত করে বাড়িতে উঠতে শুরু করেছেন। কিন্তু এখনও বাড়ির চারদিকে কাঁদাপানি। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। বন্যার পানিতে ওইসব এলাকার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। ফলে ত্রাণ নিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীদের।।

অন্যদিকে, বন্যার পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মীরসরাই উপজেলায়। তবে ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসায় মীরসরাইয়ের করেরহাটসহ কয়েকটি এলাকায় পানি কমে এসেছে। এখনও উপজেলার বেশকিছু এলাকায় পানি আছে বলে জানা গেছে।

উপজেলার কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, ধূম, নাহেরপুর, বাংলাবাজার, মোবারক ঘোনা, কাটাগাং, খৈয়াছরা, মায়ানী, মঘাদিয়া, ইছাখালীতে অনেক বন্যার্ত মানুষ এখনও দুর্ভোগে আছেন। উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ছেড়ে যাননি অনেকে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার সংখ্যা ৫৯টি। এরমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৩৬০ টি। তিন লাখ ৩২ হাজার ২৮০ জন মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বন্যায় মীরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলার ৬০৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলায় ১৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ২২ হাজার ৬৫৬ জন কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব এলাকায় চিকিৎসা দিতে ৪৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি চালু আছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ৩১৯ মেট্রিক টন চাল ও ১৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি শুকনো খাবারও দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চট্টগ্রামে অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, মীরসরাই ও হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেশকিছু এলাকায় পানি নেমে গেলেও এখনও অনেক নিম্নাঞ্চলে পানি রয়ে গেছে। মীরসরাইয়ের অনেক এলাকায় এখনও পানি নামেনি। তাই আমাদের পুনর্বাসন ও রাস্তা মেরামতের কাজ করতে আরও সময় লাগবে। তবে আমরা দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি এবং পৌঁছাতে সহায়তাও করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী বন্যার পানিতে ৬০৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে।’

জানতে চাইলে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘বন্যার পানি কমলেও অনেক জায়গায় এখনও আছে। বন্যায় অনেক সড়কে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ঘর ভেঙ্গে গেছে এবং পানিতে ভেসে গেছে। আমরা বন্যা পরবর্তী সংকট ও স্বাস্থ্যসেবা মোকাবেলায় উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলার মস্তাননগর জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া পানি পুরোপুরি নেমে গেলে আমরা পুনর্বাসনের কাজে নেমে পড়ব।’

ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুয়াবিল ইউনিয়নের কয়েকটি জায়গা ছাড়া বাকি এলাকাগুলোতে পানি নেমে গেছে। বন্যার পানিতে কিছু জায়গায় সড়কের ক্ষতি হয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর আমরা পুনর্বাসনের জন্য লিস্ট করব।’

সারাবাংলা/আইসি/এনইউ

ক্ষতচিহ্ন পানি বন্যা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর