Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুমিল্লায় বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

সারাবাংলা ডেস্ক
২৭ আগস্ট ২০২৪ ১২:৫৮

ছবি: সারাবাংলা

কুমিল্লা: ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের জেলা কুমিল্লা। গত কয়েক দিনে কুমিল্লার জেলার কিছু এলাকা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বেশকিছু এলাকা। এরমেধ্যে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট, লাকসাম মনোহরগঞ্জ ও বরুড়া উপজেলায় বেড়েছে বন্যার পানি। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাতেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আকস্মিক এ বন্যা। উপজেলার নিম্নাঞ্চলে হু হু করে বাড়ছে পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গোমতীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ১ সেন্টিমিটার কমলে আবার ১ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়।

এদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের শশীদল সালদা নদীর বেড়িবাঁধও ভেঙে প্লাবিত হয় ব্রাহ্মণপাড়া। দুই নদীর ভাঙনে এ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৭০ হাজার পরিবার। পানিবন্দি পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে ৮টি উদ্ধার দলসহ স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

হঠাৎ পানি বাড়ায় জেলার তিতাস উপজেলার মানুষ একটু আশ্রয়ের জন্য চারদিকে ছুটাছুটি করছে। রাস্তা ঘাট ও ঘর বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে তিতাস উপজেলার হাজার হাজার মানুষ একটু আশ্রয়ের জন্য আত্মীয়-স্বজন, উচু ভবন কিংবা স্কুল, কলেজ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। কুমিল্লায় নতুন করে বন্যার পানি প্লাবিত হয়েছে দেবিদ্বার উপজেলায়।

ছবি: সারাবাংলা

দেবিদ্বার উপজেলার প্রশাসন জানান, দেবিদ্বারের সুবিল ইউনিয়নের বুড়িরপাড় এলাকার গ্রামগুলোতে বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। অন্যদিকে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মনোহরগঞ্জ, বরুড়া, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায়ও সোমবার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বন্যার পানি। এইসব এলাকার লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে এখন ছুটছেন অন্যস্থানে আবার অনেকে আশয়কেন্দ্রে নিরাপদে যাচ্ছেন।

চৌদ্দগ্রামের গুণবতী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল জানান, বন্যায় সকল গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে সমগ্র উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এলাকায় পানি প্রবেশ করায় নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠে কাজ করছে।

এদিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার সাতবাড়িয়া, বক্সগঞ্জ, ঢালুয়া ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি বেশি খারাপ। এসব এলাকার বেশির ভাগ মানুষই পানিবন্দি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গত কয়েকদিন থেকে গোমতীর পানি কমেছে। তবে গোমতীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি না কমলে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না। পানি না কমা পর্যন্ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতেই থাকবে।

বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে যোগাযোগ করলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলি জানিয়েছেন, কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১১৮টি ইউনিয়নের মানুষ। আমরা বন্যার্তদের মাঝে প্রতিদিন ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলার ১৪টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৯ লাখ ৫১ হাজার ১০৯ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন ৬৬ হাজার ৯৬৬ জন। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর দুর্গত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণও অব্যাহত আছে।

পানিবন্দি পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে উদ্ধার দলসহ স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। পর্যাপ্ত নৌকা সংকটের কারণে ঢাকা থেকে ড্রাম এনে ভেলা তৈরি করে উদ্ধার কাজ চলমান রাখা হয়েছে কিছু জায়গায়। আশ্রয় কেন্দ্রে আনা বন্যার্তসহ বন্যাদুর্গতদের দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি। তবে এটি চাহিদার তুলনায় সামান্য। এ জন্য মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্ট বেড়েই চলেছে। দেখা দিয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি, সেচ্ছাসবী সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলায়। নৌকা দিয়ে ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে।

সূত্র: বাসস 

সারাবাংলা/ইআ

কুমিল্লা টপ নিউজ বন্যায় প্লাবিত বন্যার পানি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর