Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৌদ্ধমন্দিরে ইফতার: ধর্মের-সম্প্রীতির মেলবন্ধনই বাংলাদেশ


৪ জুন ২০১৮ ১৮:৪৮

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বাসাবোর মায়াকাননে গৃহকর্মীর কাজ করেন মনোয়ারা বেগম। ৬২ বছর বয়সী এই নারী শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা ছেড়ে ঢাকায় কবে এসেছিলেন- তা মনে নেই তার, প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘বহুতদিন হইলো আইছি’।

তিনি ছাড়াও মনোয়ারা বেগমের সংসারে রয়েছেন তার ছেলে, ছেলের বউ তার দুই নাতনী। ছেলে রিকশা চালায়, তবে সংসারে টাকা দেয় না। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘নেশা-পানি কইরা সব টেকা উড়ায়। এই ঘানিটা টানতে হয় আমার আর ছেলে বউরে।’

“বউ আর আমি বাসা-বাড়িতে কাজ কইরা সংসারটারে টাইনা নিতাছি। কিন্তু রোজার মাসে একটু ইফতারি না নিলে কেমনে পোলাপান দুইটা খাইতে পারব। তাই প্রতি বছর এই বৌদ্ধ মন্দিরে আসি, এইখান থেইকা যে ইফাতারি দেয়, সেইটা নিয়াই পোলাপান খুশি হয়।”

কেবল মনোয়ারা বেগম নন, বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মন্দিরের আশেপাশের এলাকার দুস্থদের কাছে এই মন্দিরের ইফতার একমাত্র ভরসা। বিকেল হতেই এই মন্দিরের সামনে এসে উপস্থিত হতে থাকেন রিকশা চালক, দিন মজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গৃহকর্মী, এমনকি ভিক্ষুক। আর মন্দিরের ভেতরে তাদের জন্য পরম মমতা ও ভালোবাসা নিয়ে ইফতার সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রধানসহ অন্য ভিক্ষুরা। গত প্রায় আট বছর ধরে রমজান মাসে এই একই চিত্র দেখা যায়।

রোববার (৩ জুন) বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নারী-পুরুষ-শিশুরা। তাদের সবার হাতে ইফতারির প্যাকেট। তারও আগে বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকেই তারা মন্দিরের সামনে আসতে শুরু করেন। একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু তাদের হাতে টোকেন দেন, টোকেন নিয়ে ভেতরে ঢুকে তারা ইফতারি নিয়ে বের হয়ে আসেন।

বিজ্ঞাপন

মন্দিরের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, একটি টেবিলের ওপর সারি সারি ইফতারির প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আর তার সামনে যতদূর চোখ যায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রোজাদাররা। সারাদিন তারা যে যার কাজ সেরে চলে এসেছেন মন্দিরে।

স্থানীয়রা বলেন, শুরুতে মন্দিরের ভেতরের রান্নাঘরে আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা রান্না করা হতো। গ্যাস সংকটের কারণে এখন আর ইফতার বানানো হয় না মন্দিরে, কিনে বিতরণ করা হয়। আলুর চপ, বেগুনি, ছোলার সঙ্গে ইফতার প্যাকেটে থাকে মুড়ি, জিলাপি, ফলের টুকরো।

গত বছরগুলোতে মন্দির প্রধান শুদ্ধানন্দ মহাথেরো নিজের হাতে ইফতার বিতরণ করলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এবার উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তবে তিনি বিছানায় থাকলেও ইফতার বিতরণে যেন কোনো অসংগতি না থাকে সেদিকে তার নজর পুরোপুরি- বললেন মন্দিরের বাসিন্দা প্রান্ত। প্রান্ত বলেন, এবারে ইফতার বিতরণের দায়িত্ব পালন করছেন বুদ্ধাপ্রিয় মহাথেরো। তাকে সহায়তা করছেন নিব্বুতি, হৃদয় আর প্রান্ত নিজেই।

প্রান্ত বলেন, গত বছরগুলোতে বেসরকারি পর্যায় থেকে অনেক সহায়তা পাওয়া যেত বলে প্রায় পাঁচশো প্যাকেট করা হতো। কিন্তু এখন নিজেদের তহবিল থেকেই ইফতারি দেওয়া হচ্ছে, যে কারণে প্যাকেটের সংখ্যা কমে গেছে। এবারে হচ্ছে মোটে দুইশো প্যাকেট।

বুদ্ধাপ্রিয় মহাথেরো সারাবাংলাকে বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ে মন্দিরের মূল ফটকে থাকে নিরাপত্তাকর্মীরা, ধর্মীয় আচার বিবেচনায় কিছুটা কড়াকড়ি থাকে। রমজান মাসে সেই বিভেদ রাখা হয় না।

তিনি বলেন, রমজান মাসে দুই ধর্মের মানুষের যে সম্প্রতির বন্ধন দেখা যায়, সেটাই বাংলাদেশ। এই চিত্রটাই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে, এর বাইরে আর কিছু নেই।

বিজ্ঞাপন

শাহজাহানপুরের লিয়াকত আলী, আবুল হোসেন, কমলা খাতুন, মরিয়ম বেওয়াসহ অন্যরা জানালেন, “কেবল ইফতারি নয়, ঈদের আগে আরও অনেক কিছু দিবো তারা। সেগুলোর জন্য চিন্তা নাই।”

প্রান্ত বলেন, পোলাওয়ের চাল, সেমাই-চিনি, শাড়ি, লুঙ্গি, কিশোরীদের ফ্রক- সামর্থ্য যা কুলাবে তা দেওয়া হবে ঈদের আগে। মানুষ আশা করে আছে ঈদের আগে নতুন পোশাক পাবে- সেই আশাতো আমরা ভাঙতে পারি না।

সারাবাংলা/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর