Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রিটায়ারমেন্টে যাব, তবে দল চাইলে থাকতেই হবে’


৪ জুন ২০১৮ ২০:০৮

।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: এই বাজেটের পরই অবসরে যাবেন বলে ভেবে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সে ক্ষেত্রে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেটই হবে তার শেষ বাজেট। তবে দল চাইলে ভবিষ্যতেও তার হাত ধরেই জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপিত হবে বলে জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভাবনা অনুযায়ী আমি এবার রিটায়ারমেন্টে যাব। তবে আমি সবসময়ই বলেছি, যদি দল চায় তাহলে থাকতেই হবে।’

সোমবার (৪ জুন) সচিবালয়ে বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে এবার ১২তম বাজেট দিচ্ছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছরের বাজেট উত্থাপন করেছিলেন তিনি। পরে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এবারের বাজেটসহ টানা ১০টি বাজেট উত্থাপন করতে যাচ্ছেন মুহিত। এর আগে কেবল সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ১২টি বাজেট দিয়েছেন।

এগুলো বাজেট দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আলাদা সময়ের অভিজ্ঞতা আলাদা। এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের বাজেটে শুধু আগের বছরের বাজেট অনুসরণ করেছি। কিন্তু যখন ২০১০ সালের বাজেট দিয়েছি, তখন থেকেই আমি ভিন্নভাবে বাজেট দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি দীর্ঘদিন অর্থনীতি খাতের বিভিন্ন দিকে কাজ করেছি। আমি খুবই গর্বিত। আমি সবসময় খুব ভালো বাজেট দিয়েছি।’

আসছে বাজেটে ভ্যাট ও করপোরেট কর কাঠামোতে পরিবর্তন আসছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটে পাঁচটি স্তরে ভ্যাট কাটা হবে। আর করপোরেট কর সর্বোচ্চ ৪২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭.৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে করপোরেট কর আগের চেয়ে কমিয়েছি। সর্বোচ্চ ৪২ শতাংশ ট্যাক্সের জায়গায় ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ করেছি। এর নিচে নিচে যা ছিল, তাতে হাত দিইনি। তাছাড়া এবারের বাজেটে ভ্যাটকে ৯ স্তর থেকে পাঁচ স্তরে নামিয়ে আনা হবে। ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার হবে ১৫ শতাংশ।’

বিজ্ঞাপন

ব্যক্তি করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই থাকছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে আয়কর সীমা পরিবর্তনই করা হয় না। আয়কর সীমা বারবার বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাও আমি দেখি না।’ অবহেলিত ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেটে বিশেষ কিছু সুবিধা দেবেন বলেও জানান তিনি।

সব বাজেটের আগেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও এ বছরের বাজেটে তেমন কিছু থাকছে না বলে জানান আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘২৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে যেভাবে আইনে বলা আছে, সেভাবেই থাকবে। কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা অনেকবারই দিয়েছি। কিন্তু এটা তেমন কাজে আসে না। শুধু প্রথমবারই একটু বেশি টাকা পাওয়া গিয়েছিল।’

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে এবারের বাজেটে একটি রূপরেখা দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল সার্ভিসের মতো কাঠামো করতে চাই। যারা কাজ করে না, তারা ছাড়া সবাই এখানে থাকবেন। প্রত্যেক সেক্টরের সমান অংশগ্রহণ থাকবে। অর্গানাইজড বেসরকারি খাত, সরকার ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা— সবাই মিলে এটি করবে। এই মুহূর্তে দেশে ৮ লাখ পরিবার পেনশনের আওতায় আছে। এটি সার্বজনীন করতে একটু সময় লাগবে। পুরোপুরি কাজ এখনো হয়নি। এর একটি রূপরেখা দেবো এবারের বাজেটে।’

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জুন মাসেই কমিশন গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি। বলেন, ব্যাংকিং কমিশন গঠন নিয়ে অনেকদিন ধরেই কাজ চলছে। কমিশন গঠনে লোক খোঁজা হচ্ছে।

বাজেটের আকার বাড়লেও এর বাস্তবায়নের হার নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সত্য যে বাজেট বাস্তবায়ন কিছুটা কম। ২০০৯ সালে যখন বাজেট দিতে শুরু করি, তখন থেকেই লক্ষ্য ছিল বাজেটকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়নে নিয়ে যাওয়া। এটি সর্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। চলতি বছরই শুধু ৮৪ শতাংশ হয়েছে, তা এখনো অসম্পূর্ণ। এরই মধ্যে আমি এটি রিকভারি করেছি। সবশেষ হিসাব হচ্ছে ৯২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা বেড়েছে। অব্যবহৃত প্রকল্প আর আগের মতো থাকে না। আশা করছি, আগামী বছরও এটি ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হবে। আমি মনে করি, ৯৩ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হওয়া খুবই ভালো।’

বিজ্ঞাপন

ছয় মাস পরেই নির্বাচন। এবারের বাজেট তাই নির্বাচনি বাজেট হচ্ছে কিনা— জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো সরকার যখনই বাজেট দেয়, তারা নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রাখে। তাই সব বাজেটই মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য দেওয়া হয়।’ সেক্ষেত্রে এবারের বাজেটে বিশেষ কোনো সুখবর থাকছে কিনা—  জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্যাক্স রেট বাড়ছে না, এটাই তো একটা সুখবর।

সারাবাংলা/জেএএম/টিআর

আরও পড়ুন-

১০ বছরে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি, এবারও বাড়বে না: অর্থমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর