Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ আগস্ট ২০২৪ ১৯:১৬

সিজিএস আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। ছবি: সিজিএস

ঢাকা: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে আলাপ তুললেও এর আগে দেশের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, মৌলিক বিষয়গুলো চিহ্নিত না করে তড়িঘড়ি করে আয়োজিত নির্বাচন কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। অর্থনৈতিক নীতিমালার সংস্কার না করে কাঠামোগত সংস্কার অসম্ভব।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. আলী রীয়াজ আরও বলেন, সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের উচিত নিজেদের একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন এবং বর্তমান সংগঠনগুলোর সংস্কার করা। ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে সব প্রতিষ্ঠানকে, একই সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে না এলে তা থেকে বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব।

সিজিএস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজন করবে। ড. আলী রীয়াজ সিজিএসের অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য। সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

বিগত ১৫ বছরে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদান করেছেন এবং মধ্য জুলাই থেকে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের স্মরণ করে ড. আলী রীয়াজ বলেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। তথ্য অনুযায়ী, এ অভ্যুত্থানে সাড়ে সাত শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বিশাল পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।

সিজিএসের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, বিগত সময়ে এমন সব নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, যা জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। ঋণখেলাপিদের বিচার থেকে রক্ষা করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে কার্যত বিপদাপন্ন করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে ধ্বংস করা হয়েছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি, সংবিধানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। গণজাগরণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই আশা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে সরকারের ওপর বিশাল দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে।

ড. রীয়াজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ উদ্ধৃত করে রাজনৈতিক আলোচনা আহ্বানের কথা উল্লেখ করে সিজিএসের উদ্যোগে সংলাপ আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংলাপগুলোর লক্ষ্য টেকসই গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা। এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণ ও বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ সংগ্রহ করা হবে। ফলে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে, যা গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করবে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ৫ মাস ধরে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজন করবে সিজিএস। সংলাপের বিষয়বস্তুগুলো হচ্ছে— সংবিধান, মানবাধিকার ও গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, বিচারব্যবস্থা, নাগরিক প্রশাসন, সংবিধানিক সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ গোয়েন্দা সংস্থা, অর্থনৈতিক নীতিমালাসহ ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক ঋণ এবং গণমাধ্যম।

সংলাপগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে হবে। জাতীয় পর্যায়ের সংলাপের অংশ হিসেবে ঢাকায় মোট আটটি জাতীয় সংলাপ হবে। এ ছাড়াও আঞ্চলিক পর্যায়ে চারটি সংলাপ হবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনায়। এখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের প্রত্যাশা, প্রস্তাবনা ও সুপারিশ উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করতে পারবেন।

সিজিএস জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিটি সংলাপের আলোচনা ও নির্দিষ্ট সুপারিশের সারসংক্ষেপ সবার জন্য প্রকাশ করবে এবং গণমাধ্যমের সহযোগিতায় সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবে। ড. আলী রীয়াজ বলেন, কেবল সুশীল সমাজ নয়, সর্বস্তরের নাগরিকদের কথা বলা প্রয়োজন, যেহেতু তারাই দেশের সবচেয়ে বড় নীতিনির্ধারক।

প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. রীয়াজ বলেন, কেবল সরকারের ওপর নির্ভর না করে নিজ নিজ জায়গা থেকে সবার দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক। ভারতীয় গণমাধ্যম এখন পর্যন্ত যত অপতথ্য বা গুজব ছড়িয়েছে, তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো সত্য তথ্য, প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করা। তাদের অপপ্রচারণার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণ থেকে বের হয়ে আসার জন্য সব প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন এখন প্রধান লক্ষ্য। সংবিধানের পুনর্লিখন ব্যতীত দলীয়করণের এই বৃত্ত থেকে বের হওয়া আদৌ সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন প্রয়োজন। একজন আবু সাঈদ দেখিয়ে দিয়েছেন, সাহস করে এগিয়ে এলে সবকিছুই অর্জন সম্ভব। সাংবাদিকতাকে সম্মানীয় পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। দলীয়করণের মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে, সেই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর রহমান আরও বলেন, সংস্কার নয়, গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রতি আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সব রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে আমরা সবার কথা শুনতে চাই।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

জিল্লুর রহমান টপ নিউজ ড. আলী রীয়াজ সিজিএস সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর