বন্যাদুর্গত এলাকায় ঝুঁকিতে ২০ লাখ শিশু: ইউনিসেফ
৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৬:১৬
দেশের পূর্ব, উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ১১ জেলা। এ অঞ্চলে গত ৩৪ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম এই বন্যায় ৫৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু জরুরি তহবিল ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলছে, বন্যায় বাড়িঘর, স্কুল ও গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার অন্তত ২০ লাখ শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ইউনিসেফ আরও বলছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা ও দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা এবং এর আগে মে মাসের ঘূর্ণিঝড় রেমালের মতো দুর্যোগগুলো খুব কাছাকাছি সময়ে হয়েছে। তিনটি জরুরি পরিস্থিতির কারণে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ শিশুসহ সারা দেশের এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তিন জরুরি অবস্থায় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা, খাদ্য ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ এবং পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ ও শিশুর জন্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণ সরবরাহের জন্য ইউনিসেফ সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার তহবিল প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ এসব তথ্য জানিয়েছে। বন্যায় ইউনিসেফের গ্রহণ করা বিভিন্ন কার্যক্রমও তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
চলমান বন্যা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ইউনিসেফ বলছে, বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মাথা গোঁজার আশ্রয় খুঁজছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তা, মাঠ-ঘাট ও ক্ষেত। লাখ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে, যাদের কাছে নেই কোনো খাবার কিংবা জরুরি ত্রাণ সামগ্রী। সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে গেলেও কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহাম বলেন, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বন্যা শিশুদের ওপর চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা ও জলবায়ু সংকটের প্রভাবের ভয়াবহতাকে তুলে ধরেছে। অনেক শিশু তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, হারিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয়। তারা খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই ইউনিসেফ সক্রিয়ভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও মুখে খাওয়ার স্যালাইনসহ জরুরি সেবাসামগ্রী সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু সব শিশুর কাছে পৌঁছাতে এবং শিশুদের ভবিষ্যতের ওপর চলমান এই সংকটের বিধ্বংসী প্রভাব রোধ করতে আরও তহবিল প্রয়োজন।
বন্যাদুর্গত এলাকায় নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরেছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফের সঙ্গে প্রাথমিক যাচাই পর্ব চালিয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিসেফ এ পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ তিন লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। এ সব মানুষের মধ্যে ইউনিসেফ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন উপকরণ, যেমন— ৩৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি ধরে রাখার জন্য ২৫ হাজার জেরি-ক্যান এবং আড়াই লাখের বেশি মুখে খাওয়ার উপযোগী স্যালাইন বিতরণ করেছে।
চলমান পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকায় যেসব উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সেগুলোর কথাও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও শিশুদের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্যবিধি উপকরণ (হাইজিন কিট), জরুরি ল্যাট্রিন তৈরি, স্যানিটারি প্যাড, মুখে খাওয়ার স্যালাইন এবং জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্রয়োজন। অসুস্থ নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও গর্ভবতী মায়েরা যেন নিরাপদে তাদের সন্তান জন্ম দিতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রম অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাপ্রবাহের সংখ্যা, তীব্রতা ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে, যা বাংলাদেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ কারণে জলবায়ু সংকটকে মৌলিকভাবে একটি শিশু অধিকার সংকট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি ইনডেক্স (চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স) অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিশুরা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির শিকার।
ব্রিগহাম বলেন, বছরের পর বছর বন্যা, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশুর জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই শিশুদের জীবন পরিবর্তন করছে। বেশি দেরি হওয়ার আগেই শিশুদের জন্য বৈশ্বিক নেতাদের জরুরিভাবে কাজ করার এবং তাদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে আমরা আহ্বান জানাই।
সারাবাংলা/টিআর
ইউনিসেফ বন্যা বন্যাদুর্গত এলাকা বন্যায় ঝুঁকিতে শিশু ভয়াবহ বন্যা