মধ্যরাতে কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মাছ শিকার
৩১ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৪৩
রাঙ্গামাটি: দীর্ঘ চার মাস ৭ দিন পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হতে যাচ্ছে। শনিবার মধ্যরাত (১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা) থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু হবে। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল হ্রদে তিন মাসের জন্য মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও পানি স্বল্পতার কারণে দুই দফায় নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো হয় আরও এক মাস সাত দিন। অবশেষে পহেলা শনিবার মধ্যরাত থেকে হ্রদে মাছ শিকার শুরু হচ্ছে। এতে করে মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকেই রাঙ্গামাটির প্রধান বিপণনকেন্দ্র ছাড়াও জেলার কাপ্তাই, মারিশ্যা এবং খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ির উপকেন্দ্রে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে কাপ্তাই হ্রদ থেকে শিকার করা মাছ নিয়ে আসবেন জেলেরা। এরপর পল্টুনে এসব মাছের শুল্কহার আদায় শেষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিপণন করা হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) হিসাবে, ২০২০-২১ মৌসুমে ৬ হাজার ৭৯৪ মেট্রিক টন, ২০২১-২২ মৌসুমে ৬ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন, ২০২২-২৩ মৌসুমে হাজার ৫ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন মাছ বিপণন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে মাছ বিপণনের পরিমাণ বাড়ার আশা করছেন কর্মকর্তারা।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বিএফডিসির পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমাদের রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান বিপণনকেন্দ্রসহ অন্যান্য বিপণনকেন্দ্রগুলোর পল্টুনগুলো আগেই প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববার ভোর থেকে পল্টুনে মাছ নিয়ে আসবেন জেলেরা। এর পর এই মাছের শুল্কহার আদায় শেষে বাজারে দেবেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর ৮ হাজার ২০০ মেট্রিক টন মাছ বিপণনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বাবদ ১৬ কোটি ৫০ লাখ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবছর কাপ্তাই হ্রদ থেকে মাছ বিপণন করা হয়েছিল ৭ হাজার ৮০০ মেট্রিক টনের মতো। এ বছর হ্রদে পর্যাপ্ত পানি আছে। ১০৮ এমএসএল টইটম্বুর পানির মধ্যে আহরণ হতে যাচ্ছে। তাই আমরা আশাবাদী ২০-২৫ শতাংশ মাছ এবার বাড়বে।’
রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেন, ‘শনিবার মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হতে যাচ্ছে। এতে করে দীর্ঘ চার মাসের বেশির সময় পর কাজে ফিরছেন আমাদের জেলে-ব্যবসায়ীরা। তাই সবার মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, এ বছর কাপ্তাই হ্রদের মাছের গুণগত মান ভালো হবে। কারণ, গতবছরও দেরিতে মাছ ধরা শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষের দিকে বৃষ্টি হয়েছে একসঙ্গেই। কিন্তু এবার কয়েকদিন পর পর বৃষ্টিপাত হওয়ায় পোনা মাছগুলো বাড়ার সময় পেয়েছে। তাই এবার মাছের আকারও ভালো হবে। আর বিপণনের ক্ষেত্রে আমরা ভাবছি, একবেলা মাছ অবতরণ করব। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পল্টুনে মাছ আনা হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রতি বছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময়ে হ্রদের মাছ বিপণনসহ স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ রাখা হয়। তবে চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের ছয়দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও হ্রদে পানি পর্যাপ্ত না বাড়ায় প্রথম দফায় ১৫ দিন ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাছ শিকার নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী চলছে না। গত বছরও কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের ১২ দিন আগেই বন্ধ করা হয় মাছ আহরণ। আবার তিন মাসের নির্ধারিত সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় দুই দফায় আরও এক মাস ১২ দিন বন্ধের সময় বর্ধিত করা হয়। সেবার চার মাস ১২ দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদে ফের মাছ আহরণ শুরু হয়। এবারও দুই দফায় এক মাস ৭ দিন সময় বর্ধিত করে ১ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হচ্ছে মাছ শিকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে দ্রুত পানি কমে যাওয়া এবং বর্ষাকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জলাবায়ু পরিবর্তনগত প্রভাব বলছেন গবেষকরা।
রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার মৎস্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও কাউখালী ছাড়া বাকি আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং মহালছড়ি উপজেলা মিলে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল প্রায় সাড়ে ২৬ হাজারের অধিক নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। যদিও জেলেদের এই তালিকার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
সারাবাংলা/পিটিএম