বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ১ বছরেই লোপাট ৩৫ হাজার কোটি টাকা: ক্যাব
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:০২
ঢাকা: গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এক লাখ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
সংগঠনটি বলছে, প্রতিযোগিতা এড়িয়ে যেমন খুশি তেমন দামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিক্রির মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ টাকার সিংহ ভাগই গেছে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। এর মধ্যে কেবল ২০২২ সালেই লোপাট হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী হলে ক্যাব আয়োজিত ‘লুণ্ঠন প্রতিরোধে জ্বালানি খাত সংস্কার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় বেসরকারি খাতে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি সামিট পাওয়ার ও ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি জানায় ক্যাব। আগামী তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম না বাড়ানোসগ আরও ১০টি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, শুধু ২০২২ সালেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এটি আমাদের এক অনুসন্ধানী গবেষণায় উঠে এসেছে। গত ১৫ বছরে ঠিক কত টাকা এই খাতে লুটপাট হয়েছে তা জানার জন্য সরকারের অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন।
শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের যেকোনো পর্যায়ের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ এবং ‘জ্বালানি অপরাধী’ হিসেবে তাদের বিচার চাই। ভোক্তা যেন সঠিক দাম, মাপ ও মানে বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেবা পায় এবং লুণ্ঠনের শিকার না হয়, সেজন্য জ্বালানি সরবরাহের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, সমতা, যৌক্তিকতা ও জবাবদিহিতা তথা জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করতেই এসব দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
ক্যাবের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয়, পণ্য মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ ও সংকট মোকাবিলা করার লক্ষ্যে তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির দাম না বাড়ানো;
- বিইআরসির আওতায় ক্যাব প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪’-এর আলোকে জ্বালানি খাত সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য একটি ‘জ্বালানি খাত সংস্কার কমিশন’ গঠন;
- লুণ্ঠনমূলক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয় এবং ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন;
- বিইআরসির বিভিন্ন নিয়োগ ও পদায়নে অংশীজনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠন;
- জ্বালানি খাতের অধীন বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড বা সংস্থার বিভিন্ন পদে পদস্থ ক্যাডার কর্মকর্তাদের অপসারণ;
- একই সঙ্গে পেট্রোবাংলা, বিপিসি, পিডিবি, আরইবি, স্রেডা এবং বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতের বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ পদগুলোর কর্মকর্তাদের পরিবর্তন;
- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ বাতিল এবং প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগ ও ক্রয়-বিক্রয় আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করা;
- ২০১২ সালে বিইআরসি প্রস্তাবিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের (পেট্রোল, ডিজেল, ফার্নেসওয়েল, কেরোসিন ইত্যাদি) মূল্যহার নির্ধারণ সংক্রান্ত তিনটি প্রবিধানমালা কার্যকর করা; এবং
- বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের যেকোনো পর্যায়ের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ ও ‘জ্বালানি অপরাধী’ হিসাবে তাদের বিচার করা।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজুসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/টিআর