দেশের ৯০ শতাংশ নদী নাব্য সংকটে ভুগছে: সবুজ আন্দোলন
২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:৪২
বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নদ-নদী নাব্য সংকটে ভুগছে বলে দাবি করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, সারা দেশে বর্তমানে এক হাজার আটটি নদী থাকলেও এর মধ্যে ৯০ শতাংশ নদী নাব্য সংকটে ভুগছে। এরই মধ্যে দেশের শতাধিক নদী বিলীন হয়ে গেছে।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে সবুজ আন্দোলনের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আলোচনা সভায় সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে ৯টি সুপারিশ করা হয়েছে।
বাপ্পি সরদার বলেন, সময়ের পরিক্রমায় নদীমাতৃক বাংলাদেশ অভিশপ্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। চলতি আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নদীর নাব্য সংকট কতটা চরম আকার ধারণ করেছে। সবুজ আন্দোলন তথ্য ও গবেষণা পরিষদ জেলা কমিটির মাধ্যমে জেলাভিত্তিক গবেষণা চালিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নদীর নাব্য সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সবুজ আন্দোলনের এই নেতা বলেন, সারা দেশে ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার জলরাশি প্রবাহিত। নদীর পাড় দখল ও দূষণে জর্জরিত। জেলাভিত্তিক জরিপে দেখা গেছে, শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শতকরা ১০০ ভাগ নদী দখল ও দূষণের শিকার। সামগ্রিক অর্থে নদীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন হতে পারত বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু বর্তমানে তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে নদীর দখল বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে।
নদী দখল ও দূষণের ফলে জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানান বাপ্পি সরদার। বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বন নষ্ট করে গড়ে উঠেছে অনেক স্থাপনা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নীরব ঘাতকগুলো ক্রমাগত আক্রান্ত করছে বাস্তুতন্ত্রকে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও চারপাশে যে জীববৈচিত্র্যের সমাহার ছিল, তা কি আজ আছে? বাড়ির পাশেও যে ঘন জঙ্গল ছিল, সেই জঙ্গল কি এখনো সবুজ?
বর্তমানে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয় সেগুলো হলো—
- আন্তর্জাতিক নদীতে উজানের দেশের বাঁধ নির্মাণ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নদীর নাব্য সংকট দূর করতে নতুন বাজেট প্রণয়ন করে নদী খনন শুরু করতে হবে;
- দেশের সব নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করতে হবে;
- নদীমাতৃক অর্থনৈতিক গুরুত্ব তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত আবাসন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে;
- বিলুপ্তপ্রায় নদীর গতি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ম্যাপে যে সব নদীর অস্তিত্ব রয়েছে তা পুনরায় খননের ব্যবস্থা করতে হবে;
- বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বন্যপ্রাণী যাতায়াতে আন্ডারপাস করিডোর নির্মাণ করতে হবে;
- শক্তিশালী ও স্বাধীন বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন বাস্তবায়নে লোকবল নিয়োগ, দোষীদের শাস্তি প্রদানে আইনি ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান রেখে আইন সংস্কার করতে হবে;
- জলাশয় ভরাট বন্ধে দেশের সব জলাশয় চিহ্নিতকরণ, সীমানা নির্ধারণ ও খননের উদ্যোগ নিতে হবে;
- পরিবেশবাদী সংগঠন, গবেষক ও পরিবেশ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে সরকারিভাবে স্টেকহোল্ডার বডি তৈরি করে মাসিক সেবা চালু করতে হবে; এবং
- পরিবেশবিষয়ক গবেষণা জোরদার করতে জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করার পাশাপাশি সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় আট বিশিষ্ট নাগরিককে গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ দেওয়া হয়। তারা হলেন— বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফিরোজ জামান, ঢাবি আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম সরোয়ার, বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার এপিএস ও বন্যপ্রাণী গবেষক আশিকুর রহমান সমী, একুশে টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার এস এম মফিউর রহমান, এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ফেরদৌস রহমান, প্রাণ-প্রকৃতি বিষয়ক সাংবাদিক ও সংরক্ষণকর্মী, বেঙ্গল ডিসকাভার আমিনুল ইসলাম মিঠু এবং দেশ টিভির রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌস মোহনা।
অনষ্ঠানে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড মজিবুর রহমান হাওলাদার, ঢাবি উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জসিম উদ্দিন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ফিরোজ জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ড আদিল মুহাম্মদ খান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসানসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/টিআর