৫ ফুট খুলল কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট, তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত

কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি নিষ্কাশনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোতে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। ছবিতে সোমবার তীব্র স্রোতের মধ্যে চন্দ্রঘোনা ফেরি থেকে একটি মোটরসাইকেল নামিয়ে আনতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজনকে। ছবি: সারাবাংলা

রাঙ্গামাটি: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন অব্যাহত আছে। কাপ্তাই হ্রদের পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় এবার বাঁধের স্প্রিলওয়ে বা জলকপাটগুলো পাঁচ ফুট করে খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রতি সেকেন্ডে বাঁধ দিয়ে ৯৮ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জলকপাটগুলোর উচ্চতা বাড়িয়ে পাঁচ ফুট করে খুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে টারবাইন দিয়ে আরও ৩২ হাজার কিউসেকসহ মোট এক লাখ ৩০ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে।

এদিকে কাপ্তাই বাঁধের জলকপাটগুলো পাঁচ ফুট করে খুলে দেওয়ার পর কর্ণফুলী নদীতে স্রোত বেড়েছে। এতে চন্দ্রঘোনা-রাইখালী রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ছিল ১০৮ দশমিক ৬৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। হ্রদে সর্বোচ্চ পানির ধারণ সক্ষমতা রয়েছে ১০৯ এমএসএল। সে হিসাবে এখনো বিপৎসীমার সামান্য নিচে রয়েছে হ্রদের পানি।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলী সারাবাংলাকে জানান, হ্রদে পানি বাড়তে থাকায় পাঁচ ফুট করে স্প্রিলওয়েগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে নিষ্কাশিত হচ্ছে ৯৮ হাজার কিউসেক পানি। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট চালু থাকায় প্রতি সেকেন্ডে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। পানি বিপৎসীমা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ নিচে না নামা পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন অব্যাহত থাকবে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে রাঙ্গামাটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আছে। হ্রদের পানি না কমায় প্লাবিত এলাকাগুলোর বেশির ভাগ অংশ থেকেই পানি নামেনি এখনো। এর মধ্যে সোমবার কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনার সঙ্গে চলাচলকারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ফেরি সোমবার দুপুর থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে রাঙ্গামাটি-রাজস্থলী ও বান্দরবানের সঙ্গে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। বিপাকে পড়েছেন এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। তবে বিকল্প সড়ক হিসাবে রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন এলাকার সেতু ব্যবহার করছেন অনেকেই।

এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. ইমরান বলেন, আমরা সিএনজি (অটোরিকশা) নিয়ে বসে আছি। দুপুর ১২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ফেরির শ্রমিক মো. শাহাজাহান বলেন, সোমবার সকালে কয়েকবার ফেরি চলাচল করতে পারলেও দুপুর ১২টার দিকে নদীতে জোয়ার শুরু হলে ফেরির গ্যাংওয়েতে প্রচুর পানি জমেছে। ফলে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে পানি ছাড়া হচ্ছে, যে কারণে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় ফেরি চলাচল করতে পারছে না।

সওজ রাঙ্গামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে চন্দ্রঘোনা-রাইখালী ফেরি চলাচল দুপুর থেকে বন্ধ আছে। নদীতে তীব্র স্রোত থাকলে মঙ্গলবারও ফেরি বন্ধ থাকতে পারে। স্রোত কমলে ফেরি সচল করা হবে।

সারাবাংলা/টিআর

কর্ণফুলীতে স্রোত কাপ্তাই বাঁধ কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট কাপ্তাই হ্রদ টপ নিউজ পানি নিষ্কাশন রাঙ্গামাটি