Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রেমের টানে বাংলাদেশে, দুবছর কারাভোগ করে কলকাতা ফিরলেন প্রিয়াংকা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:৩২

ঝিনাইদহের কারাগারে দুই বছর কারাভোগের পর মঙ্গলবার নিজ দেশে ফিরেছেন কলকাতার হাওড়ার মেয়ে প্রিয়াংকা। ছবি: সারাবাংলা

চুয়াডাঙ্গা: প্রেম করে অবৈধ পথে বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাওড়ার মেয়ে প্রিয়াংকা নস্কর (১৮)। সীমান্তে বিজিবি তাকে আটক করে। ঠাঁই হয় কারাগারে। সেখানে প্রিয়াংকাকে থাকতে হয়েছে দুবছর। শেষ পর্যন্ত কারাভোগ শেষে ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দুই দেশের সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয়াংকাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

প্রিয়াংকা জানান, বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এক ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই ছেলের পিসির বাড়ি হাওড়ায়, তাদের বাড়ির পাশে। সেখান থেকে পরিচয়, তারপর প্রেম। বিয়ের পর প্রিয়াংকাকে নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি জুটিয়ে দেবেন— প্রেমিকের এমন আশ্বাসে ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর দালালদের মাধ্যমে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন প্রিয়াংকা।

কিন্তু বিধি বাম। প্রিয়াংকা সীমান্তে বিজিবির হাতে ধরা পড়েন। তাকে পুলিশে সোপর্দ করে বিজিবি। আদালতে নেওয়া হলে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তার দুবছরের কারাদণ্ড হয়। ঝিনাইদহ কারাগারে ২৩ মাস কাটিয়ে অবশেষে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। ফিরে গেছেন নিজ দেশে।

প্রিয়াংকা বলেন, আমি ভুল করেছিলাম। যে ছেলের প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসতে গিয়ে ধরা পড়েছি, কারাগারে গিয়েছি, সেই ছেলে কোনোদিন আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। আমাকে ভুলে গেছে। আবেগে পড়ে আমার জীবন থেকে দুটি বছর ঝরে গেল। আমার মতো ভুল যেন আর কোনো মেয়ে না করে।

প্রিয়াংকার মা তনুশ্রী নস্কর ও বাবা প্রতাব নস্কর মেয়েকে নিতে হাজির হয়েছিলেন দর্শনা সীমান্তে। মেয়েকে ফিরে পেয়ে বুকে নিয়ে হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠেন তারা।

মা তনুশ্রী বলেন, দুবছর মেয়েকে হারিয়ে অনেক কষ্টে ছিলাম। রাতে ঘুমোতে পারিনি। আমার মেয়ে ভুল করেছে।

প্রিয়াংকার বাবা প্রতাব নস্কর বলেন, প্রিয়াংকা চলে আসার পর থেকে ওর কোনো খোঁজ পাইনি। আমরা ভেবেছি কোথায় না কোথায় হারিয়ে গেছে। আট মাস আগে বাংলাদেশ থেকে একজন মোবাইল ফোনে জানায়, প্রিয়াংকা ঝিনাইদহের কারাগারে আছে। আজ ওর সাজার মেয়াদ শেষ হলো। দুই দেশের সরকারের মাধ্যমে মেয়েকে ফিরে পেলাম।

ঝিনাইদহ কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া বলেন, প্রিয়াংকা প্রায় দুই বছর আমাদের কারাগারে ছিল। সে ভদ্র মেয়ে। যতটুকু পেরেছি, আমরা তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছি। তাকে তার মা-বাবার হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা খুশি।

পশ্চিমবঙ্গের এনজিও কর্মী চিত্তরঞ্জন বলেন, মেয়েটির বয়স অল্প। সে ভুল করেছে। এ রকম ভুল যেন কেউ না করে, এ জন্য অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দুই দেশের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয়াংকাকে হস্তান্তর করে বিজিবি, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন-কাস্টমস ও কারা কর্তৃপক্ষ।

এ সময় বিজিবির আইসিপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোস্তফা মিয়া, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসআই আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া, কাস্টমস কর্মকর্তা কাবিল হোসেন ও দর্শনা থানার এসআই ফাহিম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফের গেদে ক্যাম্পের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার তাপস, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ সঞ্জিব কুমার বোস, কাস্টমস কর্মকর্তা আরপি যাদব, কৃষ্ণগঞ্জ থানার এসআই তন্ময় দাসসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/টিআর

অবৈধ অনুপ্রবেশ চুয়াডাঙ্গা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর