Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুড়িগ্রামে ভিটা-বাড়ি হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

জাহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৬

কুড়িগ্রাম: ‘স্বামীর ভিটাও গেল, শ্বশুরের ভিটাও গেল; এখন আমরা কই যামু। আপনেরা আমাদের থাকনের ব্যবস্থা করেন।’ এভাবে কষ্টের কথা বললেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বেগম।

তার স্বামী ছমির উদ্দিনও বলেন, ‘এই নিয়া তিনবার বাড়ি ভাঙল। এখন থাকনের কোনো জায়গা নাই। আমাগো বাঁচান।’

তবে ভাঙন কবলিতদের জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘৬-৭টা বাড়ি ভাঙার খবর করার জন্য সাংবাদিক আসা লাগবে! আমি কোনো বক্তব্য দিব না। এমন ভাঙন কত হয়। লিখি কি হবে! আপনারা যান। আমি কথা বলব না।’

গত ১৫দিন ধরে তিস্তা নদীর ভাঙনে এই এলাকার সরিষাবাড়ি শ্যালোঘাট থেকে পূর্বে চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই দিকে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও এখানে রঙধনু আকারে ভাঙছে সর্বগ্রাসী তিস্তা নদী।

এলাকার সাবেক মেম্বর শহিদুল আলম বলেন, ‘গত ১৫দিনে এখানে ৯টি বাড়ি ভেঙেছে। ভাঙনের মুখে একটি খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫০ থেকে ৬০টি বাড়ি হুমকীর মুখে রয়েছে। গত সাতদিনে এখানে ভেঙেছে ফকির উদ্দিন, সোনামিয়া, মোন্নাফ, চাঁদমিয়া, মতিয়ার, আতিয়ার, আনম, আজিজুল ও বাবলুর বাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করলেও তারা কর্ণপাত করছে না।’

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, ভাঙন কবলিত মানুষের দুর্দশা। নদী এই শান্ত তো, এই আবার ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। গ্রামের ফসলি জমিন চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে। কৃষকের চোখে মুখে বসতবাড়ি আর জমি হারানোর বেদনা। কিন্তু কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন না করায় অসহায় ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে তারা।

বিজ্ঞাপন

কৃষক হামিদ আলী জানান, ‘আমার এক একর আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন আমার খাওয়ার জমি নাই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন পথে বসার অবস্থা।’

জাহেদা বেগম জানান, ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে শেষ মাথায় চলে আসছি। এখন মানুষের হাত-পা ধরেও থাকনের জায়গা পাইছি না। কই যামু আপনেরা কন!’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, বাজেট সংকটের কারণে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা দিতে পারছি না। তবে স্কুলটি রক্ষায় আমরা ইতোমধ্যে তিনশ জিও ব্যাগ ফেলেছি। আরো জিও ব্যাগের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এখন সীমিত আকারে পাচ্ছি। ফলে আমাদের ইচ্ছে থাকলেও সব ভাঙন কবলিত এলাকায় যেতে পারছি না।

সারাবাংলা/ইআ

কুড়িগ্রাম তিস্তা নদীর ভাঙন তিস্তা পাড় দিশেহারা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর