নিষ্ক্রিয় পুলিশকে দ্রুত সক্রিয় করতে চান এসপি রায়হান
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকার পতনের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া পুলিশ বাহিনীকে দ্রুত সক্রিয় করতে চান বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সদ্য যোগদান করা নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) রায়হান উদ্দিন খান।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আসলে জুলাই-আগস্টের পর একটু নিষ্ক্রিয় (ইন্যাকটিভ) হয়ে আছে। আমরা সক্রিয় (অ্যাকটিভ) পর্যায়ে যেতে চাই। এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এ জন্য জনগণ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নতি করতে হবে। সব রাতারাতি চেঞ্জ হবে, এরকম নয়। আমরা ফিল্ড লেভেলে কিছু চেঞ্জ আনতে চাই। একদিনে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। সব ধরনের মানুষকে যেন আমরা দ্রুত সার্ভিস দিতে পারি সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর দুই নম্বর গেটে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসপি রায়হান উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের দ্বারা যতটুকু সম্ভব, আমরা শতভাগ দিতে চাই। সিএমপি যেভাবে দিচ্ছে, আজ থেকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশও সেভাবে রেসপন্স করবে। লজিস্টিক সাপোর্টের কারণে কিছু সেবা দিতে দেরি হতে পারে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করব। দেখা গেল থানার এখিতিয়ার নেই, এ রকম অনেক বিষয় নিয়েও অনেকে আসে। অনেকে না বুঝেই আসে। আসবে স্বাভাবিক, হয়তো সে অতটা বুঝে না। সেটাও আমরা ভালোভাবে বলে দিচ্ছি, এটা ক্রিমিনাল ম্যাটার না।’
থানায় যাওয়া সেবাপ্রার্থীদের কম সময়ে সেবা দিতে ‘কুইক রেসপন্স’ করার বিষয়ে জোর দিতে হবে জানিয়ে নতুন পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা যে সাধারণ ডায়েরি করি, সেখানে হয়তো এক ঘণ্টা লাগে বা আধঘণ্টা লাগে। কিন্তু আমরা চাই কুইক রেসপন্স করতে। সবগুলো সেবা প্রদানের সময় যেন আমরা কম সময়ে নিয়ে আসতে পারি। আমরা কুইক রেসপন্স করতে পারি কি না— এ বিষয়টি নিয়ে আমি একটু কাজ করতে চাই।’
গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি চাই ইতিবাচক সমালোচনা থাকুক। আমরা যেটা ভুল করছি সেটি অবশ্যই গণমাধ্যমে আসা উচিত। যত বেশি ইতিবাচক সমালোচনা থাকবে, সেখান থেকে আমরাও তত বেশি শিখতে পারব। কিন্তু যেটা আপনারা জানলেনও না একটি সংবাদ হয়ে গেল, অন্তত সে নিউজ আমাদের কাছ থেকে একটা রেসপন্স নিয়েই করা উচিত।’
মামলার তদন্তের গুণমান নিয়ে কাজ করবেন জানিয়ে এসপি বলেন, ‘ইনভেস্টিগেশনের কোয়ালিটি নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। আমরা চাই কত বেশি কোয়ালিটি ইনভেস্টিগেশন করা যায়। আর একটি বিষয় দেখতে হবে, ইনভেস্টিগেশন এভিডেন্স বেজড হচ্ছে কি না। এভিডেন্স বেজড হলে বিচারের ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট আসবে।’
পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বরে কল দিলে রেসপন্স পাওয়া যায় না— এক সাংবাদিকের এমন অভিযোগের জবাবে এসপি রায়হান বলেন, ‘এক পুলিশ সদস্য মোবাইলে একজনের সঙ্গে কথা বলার সময় আপনি কল দিচ্ছেন, ওই সময় তো তার (ফোন কল) ধরার কথা না। একসঙ্গে সবার কল তো রিসিভ করা সম্ভব নয়।’
‘ফোনের ক্ষেত্রে একটি ভালো জিনিস হলো— এখন হোয়াটসঅ্যাপে একসঙ্গে ৫০ থেকে ১০০ জন আমাকে টেক্সট দিতে পারে। আমিও তা দেখে দেখে জবাব দিতে পারি। সবচেয়ে ভালো হয়, কোনো থানায় যখন ঘটনা ঘটে সে বিষয়ে জানতে চেয়ে টেক্সট দেওয়া হলে তখন ভালো হয়,’— বলেন রায়হান উদ্দিন খান।
বৈধ অস্ত্র জমা ও লুট করা অস্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স পাওয়া যেকোনো অস্ত্র ৪ সেপ্টেম্বরের পর অবৈধ। যদি এ রকম কোনো অস্ত্রের তথ্য থাকে, আমাদের নির্দিষ্ট নম্বরে যোগাযোগ করবেন। আমরা চাই সবাই সহযোগিতা করুক। আগস্টে লুট করা অস্ত্রগুলো উদ্ধার করার জন্য আমরা জনগণের সহযোগিতাও চাই।’
সভায় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের শতভাগ পুলিশ সময়মতো যোগদান করেছে। আর জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে পাওয়া হিসেবে জেলার ১৫টি থানায় মোট ৩৮৮টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত পর্যন্ত ৩৩৩টি অস্ত্র জমা পড়েছে।’
এ সময় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আসাদুজ্জামান ও (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) সুদীপ্ত সরকার উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/টিআর