Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিটিআইকে ড. ইউনূস— তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান হতেই হবে

সারাবাংলা ডেস্ক
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৬

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এই সমস্যার সমাধান হতেই হবে। এ সমস্যা জিইয়ে রেখে কোনো দেশের কোনো উদ্দেশ্যই সফল হবে না। আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে এই চুক্তির সমাধানে আসতে হবে দুই দেশকে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সীমান্ত হত্যা নিয়েও কথা বলেছেন অধ্যাপক ইউনূস। বলেছেন, হত্যা কোনো পরিস্থিতিতেই সমাধান হতে পারে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধে সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল ও আইনি পদ্ধতি থাকতে হবে এবং তা অনুসরণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ভারতের বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হয়েছে আজ শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর)।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের প্রথম কিস্তিতে ড. ইউনূস খোলামেলা কথা বলেছিলেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে। বলেছিলেন, বাংলাদেশ সরকার ফেরত চাওয়ার আগ পর্যন্ত যদি ভারত শেখ হাসিনাকে নিজেদের দেশে রাখতে চায়, তার জন্য শর্ত হবে যে শেখ হাসিনা চুপ থাকবেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে উসকে দেয়, এমন কিছু যেন তিনি না বলেন।

সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এ বিষয়টি (পানিবণ্টন) নিয়ে বসে থেকে কারও কোনো লাভ হচ্ছে না। আমি যদি জানতে পারি যে কতটুকু পানি পাব, সেটি নিয়ে সন্তুষ্ট না হলেও যদি আমি সেটা জেনে সেই চুক্তিতে সই করে ফেলি, সেটি এখনকার তুলনায় অনেক ভালো হবে। ইস্যুটির সমাধান হতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির জন্য ভারত সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাপ (পুশ) দেবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাপ অনেক বড় একটি শব্দ। আমি সেটা বলব না। আমরা এটি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখব (পারসু)। তবে আমাদের একসঙ্গে এটা নিয়ে বসতে হবে এবং এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

এর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ভারতের ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ওই সফরেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হওয়র কথা ছিল। তবে এই চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গ পানির সংকটে ভুগবে— এমন আপত্তি তুলে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির চুক্তিটির বিপক্ষে অবস্থান নেন। তার অস্বীকৃতির মুখে চুক্তিটি আর সই হয়নি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটি নতুন নয়, বরং অনেক পুরনো একটি ইস্যু। আমরা (বাংলাদেশ) নানা সময়ে বহুবার এটা নিয়ে বলেছি। পাকিস্তানি শাসনামল থেকেই এটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা বারবার এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে চেয়েছি, এমনকি ভারত সরকারও চুক্তিটির জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার প্রস্তুত ছিল না। আমাদের এখন এর সমাধান বের করতে হবে।’

ড. ইউনূস যখন পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলছেন, এর আগের দিন তার সরকারেরই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কথা বলেছিলেন একই ইস্যুতে। রিজওয়ানা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু সমাধানের জন্য দুই দেশের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের জোর চেষ্টা চালাবে। দুই দেশকেই নদীবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সমস্যাটি আলোচনা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

ভাটির দেশ হিসেবে নদীর পানি নিয়ে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট কিছু অধিকার রয়েছে, যেগুলোকে সামনে রেখে সরকার সামনে আলোচনা এগিয়ে নেবে বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূসও। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী আমাদের এই ইস্যুটির সমাধান করতে হবে। ভাটির দেশগুলোর (নদীর পানি পাওয়া নিয়ে) সুনির্দিষ্ট কিছু অধিকার রয়েছে। এবং আমরা সেই অধিকারগুলোই চাই।’

কয়েকদিন আগেই দেশের পূর্ব, উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার প্রসঙ্গ উঠে আসে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারে। পানিবণ্টন চুক্তি সই হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে উজানের ঢলসহ নদীর পানি বিষয়ে মানবিক আচরণের চর্চার ওপর জোর দেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘(ভারতের) হাইকমিশনার আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। এ ধরনের বন্যার সময় আমরা কীভাবে ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে আরও ভালোভাবে কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সে বিষয়ে আমি তাকে বলেছি। দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সমন্বয়নের জন্য কোনো চুক্তিরও প্রয়োজন নেই। আমরা মানবিক বিবেচনা থেকে এ ধরনের সমস্যা সমাধানে একযোগে কাজ করতে পারি, কারণ এতে জনগণের ভোগান্তি লাঘব হবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ অবশ্যই সবার জন্য সহায়ক হবে।’

সীমান্ত হত্যা নিয়েও সাক্ষাৎকারে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। সীমান্ত হত্যার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, হত্যা কখনো সীমান্ত সুরক্ষায় সমাধান হতে পারে না। ভারত সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার শিকার হওয়ার ঘটনাকে তিনি নিষ্ঠুরতা হিসেবে অভিহিত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হত্যা কোনো সমাধান নয়, কারণ এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আইনি পদ্ধতি রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি (সীমান্তে অনুপ্রবেশ) মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল ও আইনি পদ্ধতি থাকতে হবে। একপাক্ষিক কিছুই থাকা চলবে না। কেউ তো আপনাদের দেশ (ভারত) দখল করার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করছে না, যারা গুলিতে হত্যার শিকার হচ্ছে তারা বাহক মাত্র। এটি নিষ্ঠুরতা। এর অবসান ঘটাতে হবে।’

সারাবাংলা/টিআর

অন্তর্বর্তী সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিস্তার পানিবণ্টন পানিবণ্টন চুক্তি পিটিআইকে সাক্ষাৎকার প্রধান উপদেষ্টা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর