অর্থনীতি নিয়ে জনগণের মতামত চেয়েছে শ্বেতপত্র কমিটি
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৫০
ঢাকা: বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছে সরকার। সেই শ্বেতপত্র কীভাবে তৈরি করা হবে কিংবা জনগণ শ্বেতপত্র নিয়ে কী ভাবছে, তা জানতে চায় সেই কমিটি। এ উদ্দেশ্যে জনগণের মতামত ও পরামর্শ আহ্বান করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে অর্থনীতির অন্তত ১৫টি খাত নিয়ে জনগণের মতামত ও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনে গত ২৯ আগস্ট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে এই কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে পরে দেশের ১১ জন বিশেষজ্ঞকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি যেসব বিষয়ে জনগণের মতামত ও পরামর্শ আহ্বান করছে সেগুলো হলো— সরকারি পরিসংখ্যানের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা; সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জ; জিডিপির প্রবৃদ্ধির পর্যালোচনা; মূল্যস্ফীতির ধারা ও তার অভিঘাত; দারিদ্র্য, অসমতা ও বিপণ্নতা; অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ; সরকারি ব্যায় বরাদ্দে অগ্রাধিকার মূল্যায়ন; বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ও ঋণ ধারণক্ষমতা; মেগা প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন; ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত অবস্থা; জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতি; ব্যবসার পরিবেশ ও বেসরকারি বিনিয়োগ; অবৈধ অর্থ ও পাচার; শ্রমবাজারের গতিশীলতা ও যুব কর্মসংস্থান; এবং বৈদেশিক শ্রমবাজার ও প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, whitepaperbd2024 @gmail.com ইমেইল ঠিকানায় পরামর্শ পাঠানো যাবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাছে। এ ছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কমিটির কার্যালয়ে (ব্লক ৪, নিচতলা) একটি পরামর্শ বাক্স রাখা থাকবে। লিখিতভাবে সেখানে পরামর্শ ও দলিলপত্র জমা দেওয়া যাবে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যাবে ফেসবুক ও লিংকডইন পেজের মাধ্যমে। ফেসবুক পেজেরে ঠিকানা— www.facebook.com/whitepaperbd2024; লিংকডইন প্রোফাইলের ঠিকানা— www.linkedin.com/company/whitepaperbd2024।
সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে কমিটির সদস্যরা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। পরিকল্পনা কমিশনে অবস্থিত শ্বেতপত্র কমিটির কার্যালয়ে গত ২৯ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটি কী কী বিষয়ে কাজ করবে এবং কীভাবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার সংশ্লেষ ঘটাবে, এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে সভায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিম্নোক্ত মাধ্যমের সহায়তায় এই কমিটির কাছে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশ জানাতে বলা হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে তবেই একটি পূর্ণাঙ্গ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে কমিটি মনে করছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিকে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের পর্যালোচনা ও সুপারিশ তুলে ধরতে বলা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ, সরকারি ব্যয় (সরকারি বিনিয়োগ, এডিপি, ভর্তুকি ও ঋণ), ঘাটতি বাজেট অর্থায়ন, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন, সরকারি কেনাকাটা ও খাদ্য বিতরণ, রফতানি-আমদানি, প্রবাসী আয়, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদেশি অর্থায়নের প্রভাব ও ঋণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করবে এই কমিটি।
শ্বেতপত্রে সামষ্টিক অর্থনীতির পাশাপাশি খাতওয়ারি পরিস্থিতিও পর্যালোচনা করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, ব্যাংকিং, কর আহরণ, অর্থ পাচার, মেগা প্রকল্প, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোও উঠে আসবে শ্বেতপত্রে।
৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদনগুলো সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যদি কোনো খাতের প্রতিবেদন তৈরি হয়ে যায়, তা অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে কমিটি।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর