Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আহত ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা না দেওয়া চিকিৎসকদের সনদ বাতিলসহ ৭ দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:১৮

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হওয়া ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানানো চিকিৎসকদের তালিকা করে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন (সনদ) বাতিলের দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমিনের অপসারণসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠনটি। দাবি মানা না হলে আগামীতে আন্দোলন বিস্তৃত করা হবে বলেও হুঁশিয়ার দেন সংগঠনটির নেতারা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা এদেশের সচেতন নাগরিক। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের আত্মত্যাগ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের আত্মত্যাগ যেমন আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দিয়েছিল। তেমনি এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চিকিৎসক সমাজ ও মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। যার ফলশ্রুতিতে ডা. সজীবসহ একাধিক চিকিৎসক শহিদ হন।’

তিনি আরও বলেন, আন্দোলন চলাকালে আমরা দেখেছি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আহমেদুল কবির, লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) ডা. রোবেদ আমীন, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হারুনুর রশিদ, লাইন ডিরেক্টর ডা. নাজমুল ইসলাম মুন্না, লাইন ডিরেক্টর ডা. সোহেল মাহমুদ, উপ-পরিচালক ডা. মোবারক হোসেন দিগন্ত, নিপসমের পরিচালক ডা. সামিউল ইসলাম সাদিসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অন্যান্য পরিচালক, লাইন ডিরেক্টর, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সরকারি হাসপাতালে আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

ডা. হারুন বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে ছাত্রলীগের পেটুয়া বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করেছে। এমনকি নিহত ছাত্র-জনতার লাশের সংখ্যা গোপন করেছে এবং ছাত্রজনতার লাশগুলোকে সরকারকে দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু ড্যাবের চিকিৎসকরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আহত ছাত্র-জনতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে। ফলশ্রুতিতে তারা বদলি, শারীরিক নির্যাতন এবং হয়রানির শিকার হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘৮ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের সব নাগরিকের মত চিকিৎসক সমাজ আমরা আশা করেছিলাম বৈষম্যবিরোধী যে আশা নিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে তার আলোকে বৈষম্যহীন নতুন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কারের শুরুতেই আমরা দেখলাম ফ্যাসিবাদী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী বিগত সরকারের সুবিধাভোগী লোকদের স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, নিপসমের পরিচালক, আইপিএইচ এর পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। আমরা স্বাভাবিকভাবে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।’

সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম।

তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ড্যাবের চিকিৎসকসহ ভিন্নমত পোষণকারী সব চিকিৎসক কর্মকর্তারাই জুলুম, নির্যাতন, পদোন্নতি বঞ্চনা, বদলি হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় অবর্ণনীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অনেকের চাকরিচ্যুতি হয়েছে, নির্যাতনের কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা চিকিৎসকরা আশা করেছিলাম, গণ-অভ্যুত্থানে পর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার একটি আস্থাশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘গণ-অভ্যুত্থানের এক মাস হয়ে গেলেও তার কোনও প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। বরং শান্তি মিছিলে অংশগ্রহণকারী, দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকদের পদায়ন করার মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। গত ১৬ বছর বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের যথাযথ বদলি ও পদোন্নতির ব্যবস্থা না করে তাদের বঞ্চনাকে দীর্ঘায়িত এবং নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘গত ৩ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরোধিতা করে ফ্যাসিবাদের দোসর চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যে শান্তি সমাবেশ করা হয়, তার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসাবে চিহ্নিত বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক। ছাত্র-জনতার আন্দোলন যে চেতনার বিরুদ্ধে, সেই ফ্যাসিবাদী চেতনার ব্যক্তি, পদলোভী চিকিৎসককে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক সমাজ মেনে নিতে পারছে না। স্বাস্থ্য খাতে স্থবিরতা ও সংকট নিরসনে ড্যাব সাত দফা দাবি জানাচ্ছে।’

ড্যাবের দাবিগুলো হলো–
১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. রোবেদ আমীনসহ অন্যান্য সুবিধাপ্রাপ্ত ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের স্বাস্থ্য অধিদফতর ও অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ দিতে হবে।

২. আহত ছাত্র-জনতাকে যারা চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে, তাদের তালিকা করে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সব চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. বৈষম্যের শিকার সব চিকিৎসক ও কর্মচারীকে দ্রুত ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে। বর্তমানে পদোন্নতিযোগ্য প্রত্যেকের পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. মেডিক্যাল কলেজসহ প্রতিটি হাসপাতাল দুর্নীতিমুক্ত করতে যোগ্য ও বৈষম্যের শিকার শিক্ষক ও চিকিৎসকদের যথোপযুক্ত পদে পদায়িত করতে হবে। বিগত ১৬ বছর স্বাস্থ্য খাতে যত দুর্নীতি হয়েছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৫. মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারের দোসরদের সরিয়ে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের পদায়ন করতে হবে।

৬. প্রতিবাদকারী যেসব চিকিৎসকদের হয়রানিমূলক বদলি করা হয়েছে সেই বদলি আদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ভবিষ্যতে বৈষম্যের শিকার চিকিৎসকদের কোনোভাবেই হয়রানিমূলক বদলি করা যাবে না।

৭. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসাসেবার গুণগতমান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালী করতে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিটি অতি দ্রুত বাতিল করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিত্ব রেখে কমিটি পুনঃগঠন করতে হবে।

সারাবাংলা/এসবি/এমও

ছাত্র-জনতা ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর