Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাস্তায় আসুন, নিরাপত্তা দিন— পুলিশকে হাসনাত আবদুল্লাহ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের কোনো বিরোধ নেই উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আপনারা (পুলিশ) আবার রাস্তায় ফিরে আসুন, আমাদের নিরাপত্তা দিন। আমরা আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে আমরা আপনাদের সহযোগী হয়ে কাজ করব।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর লালদিঘী ময়দানে এক ‘মতবিনিময় সভা ও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ভাবনা’ শীর্ষক আয়োজনে তিনি এ সব কথা বলেন। শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে করণীয় বিষয়ে ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ছাত্র এবং পুলিশ ভাই-ভাই। আমরা আপনাদের বলতে চাই, আপনারা আপনাদের কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের মধ্যে কারা খুনি এবং দোসর ছিল- সব কিন্তু আমরা জানি। সব পুলিশ কিন্তু বেনজির না, সব পুলিশ ডিবি হারুন না। আমার বাবা, আমার ভাই, তারাও কিন্তু পুলিশ। সুতরাং পুলিশদের আমরা সহযোগিতা করব। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে যারা এখন মাঠে রয়েছেন, তাদের প্রতিপক্ষ না ভেবে, সহযোগী ভেবে আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে নেব।’

‘পুলিশদের আমরা একটা বার্তা দিতে চাই। বেনজির কিন্তু দেশে থাকতে পারেননি, ডিবি হারুন পারেননি। সুতরাং আপনারা কর্মমুখী না হয়ে ক্ষমতামুখী হলে আপনাদের পরিণতিও বেনজির-হারুনের মতো হবে।’

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করুন। আপনারা যদি ভেবে থাকেন, আপনারা গোস্বা করে বসে থাকবেন, অফিস-আদালতে কাজ করবেন না, তাহলে ভুল ভাবছেন।’

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন ও মানুষের আস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের প্রশ্ন করেন কতদিন পর্যন্ত এই সরকার থাকবে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো- আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং মানুষ যেখানে মৌলিক অধিকার ভোগ করে, সেখানে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে না, ততদিন পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা দেখতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের মধ্য দিয়ে একটা পরিবর্তন দেখতে চাই। এ পরিবর্তন যখন আসবে, তখন নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক। আমরা এমন একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাই, যেখানে আমাদের প্রেসিডেন্ট যে অবস্থায় চিকিৎসা নেবেন, নিঃস্ব ব্যক্তিও একইভাবে চিকিৎসা নেবেন। এমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই, যারা সরকারি চাকরি করে, তাদের সন্তানরাও যেন বাধ্যতামূলকভাবে ফ্রি স্কুলগুলোতে পড়াশোনা করে।’

‘আমাদের বারবার বলা হয় বিকল্প কে’– এ মন্তব্য করে হাসনাত উপস্থিত সবার মাঝে এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। সমবেতরা ‘আমরা’ বলে এর জবাব দেন।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আমাদের যে রাস্তাঘাটগুলো ছিল, সে রাস্তাঘাটে তখন কিন্তু কোনো পোস্টার ছিল না, অমুক দল-তমুক দল ছিল না। কিন্তু আপনি যদি এখন রাস্তায় বের হন, দেখবেন দেয়াল পোস্টারে ছেয়ে গেছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টের আমলে যেভাবে পোস্টার ছিল, ঠিক একইভাবে পোস্টার লাগানো হয়েছে, শুধু ছবিগুলো পরিবর্তন হয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে পুঁজি করে আপনারা সেই আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করবেন না।’

বিগত সরকারের বিভাজনের রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের মধ্যে বিভাজন করেছে। বিভাজনের রাজনীতি বিদ্যমান রেখে তারা ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। তারা সবসময় বিভাজন করেছে, কার দাড়ি আছে আর কার দাড়ি নাই, কারা মাদরাসার শিক্ষার্থী আর কারা মাদরাসার শিক্ষার্থী না। কিন্তু মন্দিরে যখন হামলা হয়, সেই মন্দির পাহারা দিয়েছে আমাদের দাড়ি-টুপিওয়ালা মাদরাসার ভাইয়েরা। আমাদের সবার প্রথম পরিচয়, আমরা বাংলাদেশি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করেছি, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ফ্যাসিস্ট সরকার সবসময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভয় দেখিয়ে আমাদের মধ্যে বিভাজন করেছে।’

সমবেতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিতে চাই, আমাদের কি আর কেউ কোনোদিন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভয় দেখাতে পারবে, আমাদের কি আর কেউ কোনোদিন বিভাজনের রাজনীতিতে নিতে পারবে, আমাদের কি কেউ আর ভাগ করতে পারবে ?’

সমস্বরে ‘না’ জবাব আসার পর তিনি নিজেই স্লোগান দেন- ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখন কি কেউ আপনাকে ফেসবুকের পোস্ট ডিলিট করতে বলছে? আপনি কি ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে পারছেন? আপনি কি মত প্রকাশ করতে পারছেন? না কি আপনাকে সবসময় সহমত প্রকাশ করতে হচ্ছে? আহ্বান থাকবে, এই স্বাধীনতা যদি অক্ষুন্ন রাখতে চান, তাহলে আপনাদের সবসময় এক থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা অর্জন সহজ, কিন্তু স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন। আমাদের একটি আন্দোলন শেষ হয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন আমাদের চলবে।’

হাসনাত বলেন, ‘আপনাদের আবার সতর্ক করতে চাই, প্রভু চলে গেছে, কিন্তু প্রভুর দাসরা আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। তারা বিভিন্নরুপে আমাদের মাঝে এসে আমাদের ইউনিটিকে ভাঙতে চাইবে। আপনাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যেভাবে আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে রেখে একসঙ্গে কাজ করেছি। একইভাবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনেও একসঙ্গে কাজ করব।’

শিক্ষার্থীদের ঐক্য ধরে রাখার তাগিদ দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। আমরা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করব। আমাদের শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের রাষ্ট্রকে দেওয়ার রয়েছে। আমাদের পিছুটান নেই, আমাদের পরিবার আছে, কিন্তু বন্ধন ছিন্ন করেছি। সুতরাং যতদিন পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্র পুনর্গঠন আমাদের প্রত্যাশিত মতো না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের বন্ধন অক্ষুন্ন থাকবে এবং যারা শহিদ হয়েছে তাদের প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, তার প্রতিফলন ঘটবে।’

এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ এবং সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিও বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রাম টপ নিউজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হাসনাত আব্দুল্লাহ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর