Tuesday 10 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খুবিতে মুগ্ধ স্মরণে সভায় শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৭

খুলনা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গণিত ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সভায় মুগ্ধর প্রয়াণের দিন ১৮ জুলাইকে ‘শহিদ মীর মুগ্ধ দিবস’ ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক জানিয়েছেন, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের পর এসব দাবি পূরণ করা হবে।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া এ স্মরণ সভা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—

• ১৮ জুলাই শহিদ মীর মুগ্ধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও যথাযথ মর্যাদায় পালন করা;

• মেইন গেটের নাম শহিদ মীর মুগ্ধ তোরণ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া;

• টিএসসির সামনে শহিদ মীর মুগ্ধ স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিফলক নির্মাণ;

• বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে শহিদ মীর মুগ্ধ হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন; এবং

• আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে জুলাই গণহত্যা নামে একটি স্মৃতি কর্নার করা।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ন্যায্য। এ বিষয়ে আমার যা করণীয় আছে তা করব। তবে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না পর্যন্ত এ দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে না।

এ দাবির সঙ্গে সংযুক্তি জানিয়ে ড. রেজাউল বলেন, মুগ্ধর স্মৃতির উদ্দেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন ও একাডেমিক ভবনে ‘মুগ্ধ পানি সরবরাহ কর্নার’ করা হবে। মৃত্যুর আগে আন্দোলনের মধ্যে ‘পানি লাগবে পানি’— মুগ্ধর এ কথা আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। তাই দেশের প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘পানি লাগবে পানি’ এই স্লোগান লিখে মুগ্ধ কর্নার করার উদ্যোগ নিতে হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এটা শুরু করব। পর্যায়ক্রমে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

ড. রেজাউল আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে শহিদ মীর মুগ্ধসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব শহিদের অবদান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা মুগ্ধর নামে প্রধান গেটের নামকরণ করেছে, এটি আনুষ্ঠানিকভাবে করা হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন স্মরণ সভা আগে কখনো হয়নি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুবুর রহমান এবং প্রায়ত মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত ও জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। সভাপতিত্ব করেন গণিত ডিসিপ্লিন প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আজমল হুদা।

স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান কবীর, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ খান, গণিত ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. এ টি এম জহিরুদ্দিন, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাক্কিবুসহ অন্যরা। মুগ্ধকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মো. মতিউর রহমান।

শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে স্মৃতিচারণ করেন ১৭ ব্যাচের মোস্তাক; ১৯ ব্যাচের অপূর্ব, শাহরিয়ার, সাকিব, রবিউল ও জাকির; ২০ ব্যাচের শামীম, সাইফ, বাঁধন, সাকিব, প্রাপ্তি, রিয়াদ, হৃদয় ও ফাহাদ; এবং ২১ ব্যাচের কাশেম আলী, আয়েশা সিদ্দিকা ও দুর্জয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রিফাহ তাসনিয়া ও ২০ ব্যাচের সাইফ নেওয়াজ।

স্মরণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালকসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

সভার শুরুতে মীর মুগ্ধসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সব শহিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় মীর মুগ্ধর সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করা হয় এবং তার জীবনীর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

সারাবাংলা/টিআর

শহিদ মীর মুগ্ধ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর