প্রথম আলো অনলাইনে হ্যাকারের হানা
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৪৫
ঢাকা: দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইট হ্যাকারের কবলে পড়েছে। দৃশ্যত সাইটের কোনো ক্ষতি না করলেও ওই হ্যাকার প্রথম আলোর হোমপেজের শুরুতেই একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। সেখানে কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিএমএস) ত্রুটির কথা উল্লেখ করে তা সংশোধনে প্রথম আলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘যুক্ত প্রচেষ্টায়’ সংশোধনের আগ্রহের কথাও জানিয়েছে।
প্রথম আলো কর্তৃপক্ষও ‘কারিগরি ত্রুটি’র কথা স্বীকার করেছে। প্রকৃতপক্ষে কী সমস্যা হয়েছে, তা নিরসনে কাজ করছে তারা।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে প্রথম আলোর হোমপেজে ‘প্রথম আলোর জন্য জরুরি সতর্কতা’ শীর্ষক একটি বার্তা প্রদর্শিত হচ্ছিল। সকাল ১১টা ২২ মিনিটের পর ওই বার্তাটি আর দেখা যায়নি।
প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম আলো হ্যাকড হয়নি। পুরো নিয়ন্ত্রণ আমাদেত হাতে রয়েছে। কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আমরা ভেন্ডরের সঙ্গে কথা বলছি। আইটি টিম কাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে কী কারিগরির ত্রুটি হয়েছে, তা আমরা কিছুক্ষণ পর জানাতে পারব।’
এর আগে সোমবার সকাল থেকে প্রথম আলো অনলাইনের হোমপেজে সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সম্বোধন করে একটি বার্তা দেখা গেছে। ওই বার্তায় বলা হয়, ‘আমি প্রথমেই এ বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাই যে আমি আপনাদের শত্রু নই বা দেশের সর্বাধিক পঠিত ও সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য বাংলা সংবাদপত্র প্রথম আলোর কোনো সম্পদের ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই। কিন্তু অনলাইন মাধ্যমে সংবাদ প্রচারের জন্য আপনাদের ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত কুইনটাইপ টেকনোলজিস ইন্ডিয়া লিমিটেডের তৈরি কনটেন্ট ম্যানেজমেন্টে সিস্টেমে (সিএমএস) গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ত্রুটি রয়েছে।’
‘প্রথম আলোর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী’ পরিচয়ে বার্তায় ওই হ্যাকার বলেন, ‘এই ত্রুটি ব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রথম আলোর পূর্বপ্রকাশিত কোনো সংবাদ বা তথ্য পরিবর্তন, পরিমার্জন বা নতুন কোনো মিথ্যা তথ্য সংবাদ আকারে প্রকাশ করে প্রথম আলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে গুজব ছড়াতে পারে।’
প্রথম আলোর সঙ্গে ‘যুক্ত প্রচেষ্টা’র মাধ্যমে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রথম আলোর ওই ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ লিখেছেন, ‘আপনাদের সতর্ক করতে আমি এ বার্তাটি প্রকাশ করছি। আপনাদের প্রযুক্তি বিভাগ ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের সামনে আমি সব নিরাপত্তা ত্রুটি সম্পর্কে তুলে ধরতে ইচ্ছুক এবং যুক্ত প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করতে আগ্রহী।’
বার্তায় ওই হ্যাকার তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি ইমেইল ঠিকানাও যুক্ত করেছেন।
আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী হ্যাকাররা মূলত স্বনামধন্য সব ওয়েবসাইট ও পোর্টালে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ত্রুটির সুযোগ নিয়ে ওই সাইট বা পোর্টালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে থাকে, যেটি হ্যাকিং হিসেবে পরিচিত। কারিগরি ত্রুটির মাত্রা কতটুকু, তার ওপর নির্ভর করে হ্যাকার সাইটের কতটুকু নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইটি বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রথম আলোর হোমপেজেই বার্তাটি প্রকাশ করা হয়েছে। এর অর্থ ওই হ্যাকার প্রথম আলোর কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের কোনো না কোনো অংশ নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছেন। আবার প্রথম আলো বার্তাটি মুছে ফেলার মাধ্যমে স্পষ্ট করেছে, নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতছাড়াও হয়নি। প্রথম আলো প্রকৃত কারিগরি ত্রুটিটি চিহ্নিত করে সেটি সমাধান করতে পেরেছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে এই হ্যাকিংয়ের ফলে তাদের ভুগতে হবে কি না।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর