Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ বছরের কাজ শেষ হয়নি ৬ বছরেও

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩১

সুনামগঞ্জ: বহুল প্রত্যাশিত তাহিরপুরের টাকেরঘাট পর্যটন এলাকার ডাম্পের বাজার থেকে নতুন বাজার সেতুর কাজ তিন বছরে শেষ করার সময়সীমা থাকলেও শেষ হয়নি ছয় বছরেও। এখনও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শেষ করতে পারেনি পুরো কাজ।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ধীরগতির কারণে অতিরিক্ত সময়েও শেষ হয়নি কাজ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে হচ্ছে এই কাজ।

তাহিরপুরের পর্যটন এলাকা টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী), বড়গোপ টিলা, যাদুকাটা ও শিমুলবাগানে পর্যটকদের চলাচলে গতি আনতে ২০১৮ সালে পাটলাই নদীর উপর এই সেতু নির্মাণ শুরু হয়।

ডাম্পের বাজার থেকে নতুন বাজারের এই সংযোগ সেতুর কাজ পায় তমা কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ৪৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকার সাড়ে ৪০০ মিটার এই সেতুর কাজ শেষ করার কথা ২০২১ সালের মধ্যে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও কাজের ধীরগতির কারণে এখনও শেষ হয়নি সেতুর কাজ।

সরজমিনে দেখা যায়, এখনও সেতুর উপরের স্লাবের কাজ বাকি রয়েছে। সেখানে রড বিছানোর কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। সেতুর উপরের দু’পাশের রেলিংয়ের কাজও শেষ হয়নি। পুরো সেতুর নয়টি স্লাবের আটটি শেষ হলেও প্রতি স্লাবের শুরু ও শেষ অংশ সমান হয়নি। এজন্য যে ধরণের ঢালাইয়ের প্রয়োজন, তাও শুরু হয়নি। এছাড়াও দু’পাশের ২০০ করে ৪০০ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ বাকি রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছেন, পুরোপুরি কাজ শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় লাগবে।

এদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধীরগতিতে কাজ করেছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলেও অনেক সময় কাজ বন্ধ ছিল। একারণে সময়মতো কাজ শেষ করা যায়নি। এখনও যে কাজ বাকি রয়েছে, তা শুষ্ক মৌসুম লাগবে শেষ করতে। এটি শেষ হলে এই এলাকায় পর্যটনে গতি বাড়বে। যোগাযোগের সহজলভ্যতা ও সুযোগ বাড়বে। পর্যটকের ভোগান্তি কমবে।

বিজ্ঞাপন

তাহিরপুরের উত্তর শ্রীপুরের বাসিন্দা শোভা মিয়া বলেন, এই সেতুটি চালু হলে আমাদের নৌকা ভাড়া কমবে। তিন বছর আগে কাজ শেষ করার কথা। এখনও কোনো খবর নেই। শুরুতে যে গতিতে কাজ হয়েছে, পরে তা কমেছে। যে জায়গায় শতাধিক শ্রমিক প্রয়োজন, সেখানে কয়েকজন কাজ করে। এভাবেই থেমে থেমে কয়েক বছর ধরে কাজ চলছে। এতে আমাদের স্বপ্ন দেখার সাহসও দুর্বল হচ্ছে।

একই ইউনিয়নের দুধেরআউটা গ্রামের বাসিন্দা মো. মুন্না বললেন, সাড়ে ৪০০ মিটার সেতু নির্মাণ করতে সাড়ে পাঁচ বছর হয়ে গেছে। ঠিকঠাক কাজ করলে সাড়ে তিন বছর আগে শেষ করা যেতো। কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের দাবি বেশি শ্রমিক লাগিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যেন দ্রুত কাজ শেষ করে।

বালিয়াঘাট গ্রামের বাসিন্দা লুৎফর রহমান বাবর বললেন, এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই সেতু নির্মাণের। ২০১৮ সালে কাজ শুরু হলেও ধীরগতির কারণে সময়মতো শেষ হয়নি। একারণে কাজ শুরু’র পরে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, ধীরগতির কারণে তা থমকে গেছে। এটি চালু হলে পর্যটন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক) থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যটন স্পটে আলাদা গতি আনবে সেতুটি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের ইঞ্জিনিয়ার শাখাওয়াত হোসেন বললেন, কাজ শুরুর পরে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে গতি কিছুটা কমেছে। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় সেতু নির্মাণের মালামাল পরিবহনে জটিলতাও ছিল। এছাড়াও কাজ শুরুর পরে মালামালের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। তবুও আমরা কাজ ছেড়ে যাইনি। এতো প্রতিকূলতার পরেও আমরা কাজ করছি। আশাকরি দ্রুত কাজ শেষ করতে পারব।

বিজ্ঞাপন

সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বললেন, এই সেতুটি করতে প্রায় ছয় বছর সময় লেগে যাচ্ছে। ওখানে বছরে তিন থেকে চার মাসের বেশি সময় কাজ করা যায় না। একারণে সময় বাড়াতে হয়েছে। বর্তমানে একটি স্লাব ও দু’পাশের অ্যাপ্রোচের কাজ বাকি রয়েছে। আশাকরি আগামী ছয় মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করে মানুষের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এনইউ

এলজিইডি পাটলাই নদী সেতু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর