ঢাকায় এসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, তথ্য না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুলিশ
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:৩২
ঢাকা: মাটিতে বিছানো পুরনো একটি কার্টনের ওপর হাত-পা ছড়ানো অবস্থায় পড়ে ছিল বিবস্ত্র দেহ। মধ্যবয়সী নারীটির চুল এলোমেলো। স্পর্শকাতর অঙ্গ থেকে ঝরছিল রক্ত। রাজধানীর শাহবাগ থানার অদূরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছবির হাটের গেটের ভেতর থেকে এমন অবস্থায় এক নারীকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
জানা যাচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা এসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ওই নারী। তবে পুলিশ বলছে, তার কাছ থেকে মিলছে না পর্যাপ্ত তথ্য। যে কারণে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় ছবির হাটের গেটের ভেতরের দিকে। দুপুরের দিকে তাকে নেওয়া হয় ঢামেক হাসপাতালে। সেখানকার ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) বর্তমানে ওই নারী চিকিৎসাধীন।
ওই নারীকে রোববার সকালে বিবস্ত্র ও অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে যারা উদ্ধারের উদ্যোগ নেন তাদের একজন ওই এলাকার চা বিক্রেতা সোলাইমান মিয়া। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সোলায়মান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে ডেকে একটি শাড়ি দিয়ে তার বিবস্ত্র শরীর ঢেকে দেই। আরেক মহিলার সহায়তা নিয়ে আমার স্ত্রী সেবা দিলে অনেকক্ষণ পর উনার জ্ঞান ফেরে। ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, কয়েকজন ব্যক্তি মিলে তাকে রাতভর ধর্ষণ করেছে।’
আরও কয়েক ঘণ্টা পর রোববার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও কয়েকজন সংবাদ কর্মীর সহযোগিতায় শাহবাগ থানা পুলিশ ওই নারীকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ ওই নারীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানতে পারেনি। ফলে নিতে পারেনি প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থাও।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন সোমবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোববার ও সোমবার ওই নারীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হতো। কিন্তু কোনো তথ্যই মিলছে না। ধর্ষণের বাইরে আর কোনো কথাই বলছেন না তিনি। একবার বলেছেন তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। তার কথা অনুযায়ী ওই থানার ওসিকে ফোন করে ঘটনা জানানো হয়েছে। এ রকম কিছু বলতে পারেননি ওসি। তবে আরও চেষ্টা চলছে।’
ওই নারীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে এসআই জাহাঙ্গীর বলেন, ওই নারী গত শুক্রবার (৭ সেপ্টম্বর) আরেক পরিচিত নারীর সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, গুলিস্তান এলাকায় পৌঁছানোর পর তার সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলেন। ওই দিন সন্ধ্যার পর কয়েকজন লোকের খপ্পরে পড়েন তিনি। ওই লোকগুলো তাকে নানা জায়গায় নিয়ে যান এবং দলবেঁধে তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।
শাহবাগ থানার এই এসআই আরও বলেন, আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে তথ্য প্রয়োজন। নাম-ঠিকানা প্রয়োজন। এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) প্রয়োজন। কিন্তু কোনো তথ্যই মিলছে না। তাকে এখন ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। আমরা লেগে আছি ঘটনাটি নিয়ে। কোথাও কোনো তথ্য মিলছে না। কেউ সহায়তাও করছে না। আইনি ব্যবস্থা কীভাবে নিতে পারি তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
ওই নারীর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে আসা এক মধ্যবয়সী নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাহবাগ থানা পুলিশ দেখভাল করছে। তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর